জলদূষণ, দূষণের উৎস ও তার প্রভাব শনাক্তকরণে নতুন পদ্ধতি

জলদূষণ, দূষণের উৎস ও তার প্রভাব শনাক্তকরণে নতুন পদ্ধতি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩ এপ্রিল, ২০২৪

জলে দ্রবীভূত নানা জৈব অণুর অস্তিত্ব জলের বাস্তুতন্ত্রে ইতিবাচক বা ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। এই ধরনের জৈব অণুগুলো মিলে জলের রাসায়নিক বৈচিত্র্য সৃষ্টি করে। জলে দ্রবীভূত এইসমস্ত জৈব পদার্থ হাজার হাজার পৃথক অণু নিয়ে গঠিত বেশ জটিল মিশ্রণ, যেখানে প্রত্যেকটা অণুর নিজস্ব অনন্য বৈশিষ্ট্য থাকে। এদের উপস্থিতি নদী ও হ্রদের নানা প্রক্রিয়া যেমন পুষ্টিচক্র, কার্বন সংরক্ষণ, আলো শোষণ এবং খাদ্যজালের মিথস্ক্রিয়া প্রভাবিত করে বাস্তুতন্ত্রের কার্যকারিতা নির্ধারণ করে। সুতরাং জলের গুণমান জানতে কী ধরনের জৈব পদার্থ আছে তা জানা জরুরি।
নদী, পুকুরের জলের দ্রবীভূত জৈব পদার্থের উৎস হল শহর থেকে নিঃসৃত নর্দমার জল বা বৃষ্টি ধোয়া জল, চাষবাসে ব্যবহৃত কীটনাশক ও রাসায়নিক, অ্যারোসল বা দাবানল থেকে নির্গত নানা কণা। নতুন এক পদ্ধতিতে বেশ তাড়াতাড়ি নদী বা মিষ্টি জলের হ্রদে বা পুকুরে গাড়ির টায়ার থেকে মাইক্রোপার্টিকেল, চাষের জমিতে ব্যবহৃত কীটনাশক, অ্যালগাল ব্লুম থেকে নিঃসৃত ক্ষতিকারক টক্সিনের মতো নানা দূষক শনাক্ত করা যাবে। এই সমস্ত রাসায়নিকের জন্য নদী বা হ্রদের জলে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে তাও যেমন জানা সম্ভব হবে, তেমন আশ্চর্জনক হলেও সত্যি যে জলে উপস্থিত দূষকের উৎসও জানা সম্ভব হবে। সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত জলের দূষণ শনাক্তকরণের নতুন এই পদ্ধতি হল হাই রেসোলিউশান মাস স্পেকট্রোমেট্রি, যার সাহায্যে জলে অবস্থিত সমস্ত জৈব অণুগুলো শনাক্ত করা সম্ভব। কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের গবেষকদের আবিষ্কৃত এই পদ্ধতিতে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই দূষকগুলো নির্ণয় করা সম্ভব। আগের প্রচলিত পদ্ধতিতে নানা ধরনের যন্ত্রপাতি, নানা পদ্ধতি ব্যবহার করে যেমন জলের গুণমান নির্ণয় করতে হত তেমন তা প্রচুর সময় সাপেক্ষও ছিল। আগে নদীতে জৈব নাইট্রোজেন বা ফসফরাস দূষণের পরিমাণ পরিমাপ করা যেত কিন্তু দূষণ কীভাবে হচ্ছে তা জানা যেত না। কিন্তু নতুন পদ্ধতিতে নদী বা হ্রদের জলে বিভিন্ন উৎসের পৃথক পৃথক আণবিক ফিঙ্গার প্রিন্ট থেকে দূষণের উৎসও শনাক্ত করা যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *