১০ কোটি ১০ লক্ষ ভারতীয় ডায়াবিটিসে আক্রান্ত। সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা তেমনই বলছে। ‘দ্য ল্যানসেট ডায়াবিটিস এবং এন্ডোক্রিনোলজি’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতের মোট জনসংখ্যার ১১.৪ শতাংশই ডায়াবেটিক। সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে প্রায় ১৩ কোটি ৬ লক্ষ ভারতীয়ের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৪২.৫ কোটি। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি মানুষ প্রতিদিন ইনজেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন নেয়। নেচার ন্যানোটেকনোলজিতে প্রকাশিত এক নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে যে আক্রান্ত মানুষেরা শীঘ্রই সিরিঞ্জ বা ইনসুলিন পাম্পের বদলে একটি নতুন বিকল্প ব্যবহার করতে পারবে। শরীরে স্মার্ট ইনসুলিন সরবরাহের নতুন উপায় খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন ইনসুলিনের এই ক্যাপসুল শুধু খাওয়া যেতে পারে বা এক টুকরো চকোলেটের মধ্যে দিয়েও খাওয়া যেতে পারে। এর ভিতরে ক্ষুদ্র ন্যানো-ক্যারিয়ারের মধ্যে ইনসুলিন রয়েছে। এর কণাগুলো এতই ক্ষুদ্র যে একটি সাধারণ মাইক্রোস্কোপের নীচেও দেখা যায় না। ইউআইটি নরওয়ের আর্কটিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার ম্যাককোর্ট ব্যাখ্যা করেন যে ইনসুলিন নেওয়ার এই পদ্ধতিটি আরও সুনির্দিষ্ট কারণ শরীরের যে অংশে এর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেখানে দ্রুত ইনসুলিন সরবরাহ করে৷ একটি সিরিঞ্জের সাহায্যে ইনসুলিন গ্রহণ করলে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং অবাঞ্ছিত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। বহু বছর আগে ইউনিভার্সিটি অফ সিডনি এবং সিডনি লোকাল হেলথ ডিস্ট্রিক্টের গবেষকরা আবিষ্কার করেছিলেন যে লিভারে ন্যানো-ক্যারিয়ারের মাধ্যমে ওষুধ সরবরাহ করা সম্ভব। তারপরে অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপে পদ্ধতিটি আরও বিকশ লাভ করে। আজ অবধি মানুষকে ইনসুলিন ইনজেকশন হিসাবেই নিতে হয়। ম্যাককোর্ট ব্যাখ্যা করেছেন যে ন্যানো-ক্যারিয়ারের মাধ্যমে ইনসুলিনের সমস্যা হল যে এটি পাকস্থলীতেই ভেঙে যায় এবং শরীরের যেখানে প্রয়োজন সেখানে পৌঁছায় না। মুখে খাওয়া ডায়াবেটিসের ওষুধের ক্ষেত্রে এটি একটি বড়ো চ্যালেঞ্জ।
কিন্তু এখন এই চ্যালেঞ্জের সমাধান করেছেন গবেষকরা।
ম্যাককোর্ট আরও বলেন তারা এমন এক আবরণ তৈরি করেছেন যা ইনসুলিনকে পাকস্থলীর অ্যাসিড এবং পাচকরস থেকে রক্ষা করে, যতক্ষণ না এটি তার গন্তব্যে, অর্থাৎ লিভারে পৌঁছায়। রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হলে এনজাইমটি সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং লিভারে পৌঁছলে তার আবরণটি ভেঙে ইনসুলিন নির্গত করে এবং লিভার, পেশী এবং চর্বিতে কাজ করে। অর্থাৎ যখন রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে, তখন দ্রুত ইনসুলিন নিঃসৃত হয় এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ, যখন রক্তে শর্করার পরিমাণ কম থাকে, তখন কোনো ইনসুলিন নিঃসৃত হয় না। গবেষকরা ব্যাখ্যা করেন যে এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ব্যবহারিক এবং রোগীর পক্ষে উপকারী একটি পদ্ধতি কারণ এটি রক্তে শর্করার কম হওয়ার ঝুঁকিকে অনেকাংশে কমিয়ে দেয়, এবং রোগীর চাহিদার উপর নির্ভর করে ইনসুলিন নিয়ন্ত্রিতভাবে নিঃসরণ করতে সাহায্য করে। মুখে খাওয়ার এই ইনসুলিন ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করা হয়েছে। এবং শেষ পর্যন্ত, ওষুধটি এখন অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল বেবুন কলোনিতে বেবুনের উপর পরীক্ষা করা হয়েছে। মানুষের উপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ২০২৫ সালে শুরু হবে। গবেষকরা আশা করছেন যে নতুন ওষুধটি ২-৩ বছরের মধ্যে সবার ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হতে পারে।