সমুদ্রে বেঁচে থাকার জন্য, বহু প্রাণীদের ছদ্মবেশ বেছে নিতে হয়। কিন্তু কেউ কেউ এই বৈশিষ্ট্যকে এক অন্য স্তরে নিয়ে যায়। এই আছে, এই নেই। চোখের নিমেষে এক্কেবারে হাওয়া! সামুদ্রিক এই প্রাণীগুলি যেন ম্যাজিক জানে। ভুতুড়ে এই প্রাণী আলো থেকে লুকিয়ে থাকে, তাদের কাচের মতো স্বচ্ছ দেহ জলের তলায় সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায়। গ্লাস স্কুইড নামের এই প্রাণী আর বেশ কয়েকটি মাছের লার্ভা এই কৌশলটি ব্যবহার করে, তবে এর একটি খামতি রয়েছে। এই প্রাণীদের চোখ আলো প্রতিফলিত করে, তাদের চোখ চকচক করে যা তাদের অবস্থান সম্পর্কে শিকারীদের জানান দেয় কারণ স্বচ্ছ চোখ থাকলে সেই চোখ কাজ করবে না, কিছু গাঢ় রঞ্জক পদার্থ দৃষ্টিশক্তির জন্য অপরিহার্য। কিছু চিংড়ি এবং চিংড়ির লার্ভা এই সমস্যা থেকে বাঁচার একটি উপায় বের করেছে। তাদের চোখ আলোক-পরিচালনাকারী কাচের মতো একটি আবরণ দিয়ে আবৃত থাকে যা কার্যকরভাবে তাদের চোখের ওই দীপ্তিকে পার্শ্ববর্তী জলের রঙের সাথে মিলিয়ে দেয়। এইভাবে, ওই ক্ষুদ্র খোলস যুক্ত জলজ প্রাণী বা ক্রাস্টেসিয়ানরা অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে।
সায়েন্সে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে, গবেষকরা চোখের এই কাচের মতো পদার্থের জটিল উপাদান পরীক্ষা করেন। তারা দেখেন যে এগুলো আইসোজ্যানথোপটেরিন নামক পদার্থ দিয়ে তৈরি খুব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোলক দ্বারা গঠিত। এই গোলকগুলো, যা ক্ষুদ্রাকৃতি ডিস্কো বলের মতো আলোকে প্রতিফলিত করে, তাদের মধ্যে ফাঁক দিয়ে একটি অসংগঠিত বিন্যাস তৈরি করে, তাই ক্রাস্টেসিয়ানরা এখনও দেখতে পারে। কাচের এই আবরণ তাদের ছদ্মবেশের চাহিদার উপর ভিত্তি করে – গাঢ় নীল থেকে হলদেটে সবুজ বিভিন্ন রঙের আলো প্রতিফলিত করতে পারে। পরীক্ষাগারে দেখা গেছে যে, সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসা চিংড়ির চোখ হলুদ আলো প্রতিফলিত করে, কিন্তু যেগুলো সারা রাত অন্ধকারে ছিল তারা সবুজ আলো প্রতিফলিত করে। মজার বিষয় হল, গোলকের আকার এবং বিন্যাস তাদের প্রতিফলিত আলোর রঙকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সেই রঙটি সব দিক থেকেই এক। এই ছোটো গোলকর উপর আরও গবেষণার প্রয়োজন যার সাহায্যে গবেষকরা সৌর প্যানেল, রিমোট সেন্সিং যন্ত্র প্রভৃতিতে আলোক-ব্যবহারকারী প্রযুক্তি উন্নত করার চেষ্টা করতে পারে। ইসরায়েলের বেন-গুরিওন ইউনিভার্সিটি অফ নেগেভের গবেষক বেঞ্জামিন পামারের মতে বর্তমানে রঞ্জক পদার্থ, প্রসাধনী এবং অন্যান্য অপটিক্যাল সামগ্রীতে অজৈব পদার্থের প্রতিস্থাপন হিসাবে জৈব, উচ্চ-প্রতিসরণ-সূচক উপকরণ সন্ধানের প্রতি উৎসাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।