জার্নাল অফ নিউরোসায়েন্সে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হচ্ছে, কিছু মানুষের শোনার সময় দৃষ্টি অনুসরণ করে শ্রবণশক্তি হ্রাসের প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করা যায়। সাধারণত, একজন চিকিৎসক রোগীর শ্রবণ সমস্যাগুলির জন্য তিনি তাদের কান পরীক্ষা করেন। যে ভলিউমে রোগীরা প্রথমে একটি বিশুদ্ধ স্বর উপলব্ধি করে তাকে তাদের শ্রবণ থ্রেশহোল্ড বলা হয়, এবং যদি এই কাট-অফটি খুব বেশি হয় তবে শ্রবণযন্ত্রের প্রয়োজন আছে বলে মনে করা হয়। এই পরীক্ষার সমস্যা হল যে শুনতে অসুবিধা হওয়ার প্রথম লক্ষণ আবির্ভূত হওয়ার এক বা দুই দশক পরে একজন ব্যক্তির শ্রবণশক্তি হ্রাস পেয়েছে তা ধরা পড়ে। টরেন্টো ইউনিভার্সিটি এবং কানাডার রোটম্যান রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকরা এবিষয়ে সম্ভাব্য একটা উপায় খুঁজে পেয়েছেন। অংশগ্রহণকারীদের বক্তৃতা শোনার সময় তাদের চোখ মনোযোগ সহকারে পর্যবেক্ষণ করে, মনোবিজ্ঞানী এরিক কুই এবং জ্ঞানীয় স্নায়ুবিজ্ঞানী বজর্ন হেরম্যান শ্রবণে অসুবিধার একটা লক্ষণ চিহ্নিত করেছেন। একজন ব্যক্তি যত বেশি শুনতে সংগ্রাম করে, তার দৃষ্টি তত বেশি স্থির হয়। পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে যে মানুষ যখন গভীর চিন্তা করে তখন চোখের মণি বিশেষ নড়ে
কুই এবং হারম্যান এখন দেখিয়েছেন যারা শোনার জন্য অতিরিক্ত প্রচেষ্টা করছেন সেই শ্রোতাদের চোখের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। গবেষণায় তিনটি পরীক্ষা করা হয়েছে, অল্পবয়সী প্রাপ্তবয়স্ক, যাদের শ্রবণশক্তি সুস্থ, তাদের চিবুক একটি কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে রেখে আরামদায়ক ভলিউমে শব্দ শোনানো হয় আর তাদের চোখের নড়াচড়া রেকর্ড করা হয়েছিল।
প্রথম পরীক্ষায় ২৬ জন অংশগ্রহণকারীকে অর্থহীন বক্তৃতা শোনানো হয়েছিল। বক্তৃতার প্রতি রাউন্ডের পরে, অংশগ্রহণকারীদের শোনার বোধগম্যতা পরীক্ষা দেওয়া হয়েছিল। মানুষের বক্তৃতার রেকর্ড চালানোর সময়, অংশগ্রহণকারীদের সামনে কম্পিউটারের স্ক্রিন ফাঁকা ছিল বা একটি নির্দিষ্ট বর্গক্ষেত্র দেখানো হয়েছিল। গবেষকরা লক্ষ করেছেন যে শোনার সবচেয়ে কঠিন অবস্থার সময় ও ভালোভাবে বক্তব্য বোঝার সময় চোখের নড়াচড়া হ্রাস পেয়েছে ।
দ্বিতীয় পরীক্ষায়, ২২ জন অংশগ্রহণকারীকে রেকর্ড করা সংক্ষিপ্ত বাক্যের তালিকা শোনানো হয়েছিল, তখন তাদের সামনে স্ক্রিনে এলোমেলোভাবে একটি বিন্দু নড়ছিল। এরপর আবার শ্রবণ বোধগম্যতার পরীক্ষা করা হয়েছিল। এই ফলাফল দেখায় যখন বক্তৃতা শোনা কঠিন হয় তখন চোখের নড়াচড়া কমে যায় এবং শোনার প্রচেষ্টা বাড়ে।
শেষ পরীক্ষাতে ২৩ জন অংশগ্রহণকারীদের ১০-১১ মিনিটের দুটি গল্প শোনানো হয়েছিল। একটা গল্প এলোমেলোভাবে বলা হয়েছিল অন্যটি ক্রমানুসারে বলা হয়েছিল কিন্তু তা মাঝে মাঝে মানুষের বকবক দিয়ে ঢাকা পড়ে যাচ্ছিল। এই বাধা দেওয়ার শব্দ কখনো জোরে কখনো আসতে হয়ে গল্প শোনা কঠিন বা সহজ করে দিচ্ছিল। সেই সময়ে অংশগ্রহণকারীদের সামনের পর্দায় ষোলটা বিন্দু এলোমেলোভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। এরপর একটা বোধগম্যতার পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল।
তিনটে পরীক্ষায়, অংশগ্রহণকারীর মণির প্রসারণ বা সংকোচন থেকে তাদের শ্রবণশক্তির তারতম্য বিশেষ বোঝা যায় নি। অংশগ্রহণকারীদের সামনে স্ক্রিনে যা দেখানো হয়েছিল তা তাদের চোখ কতটা নড়াচড়া করে তার উপর সামান্য প্রভাব ফেলেছিল। এর থেকে বোঝা যায় চোখের নড়াচড়া একজন ব্যক্তি কতটা কঠোরভাবে শোনার চেষ্টা করছে তা বোঝাতে পারে। প্রচেষ্টামূলক শ্রবণ শুধুমাত্র শ্রবণশক্তি হ্রাসের কারণে হয় না, তবে এটা শুনতে অসুবিধা হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে একটা হতে পারে।