রাতে ঘুমের সময়ে শরীরের প্রায় সব অঙ্গ বিশ্রামে থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে বিশ্রাম কথাটা কিছুটা ব্যাঙ্গাত্মক। জানা যায়, ঘুমের সময়ে শরীরের বেশ কিছু অঙ্গ বিশ্রামে থাকলেও, সব রকম কাজ মোটেও বন্ধ হয় না। রাতে চারিদিক নিস্তব্ধ থাকলেও মস্তিষ্ক কিন্তু সজাগ থেকে। ঘুমের সময় সব কিছু শান্তিপূর্ণ থাকলেও মস্তিষ্কে আলোড়ন সৃষ্টিকারী কার্যকলাপ ঘটতে থাকে। ঘুমের সময়, মস্তিষ্কের কোশগুলো বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে যা ছন্দবদ্ধ তরঙ্গে একত্রিত হয় এবং তা মস্তিষ্কের কোশের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
কিন্তু আমরা যখন বিশ্রাম নিচ্ছি তখন মস্তিষ্ক কেন সক্রিয় থাকে?
সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ করেছেন যে মস্তিষ্কের এই তরঙ্গ ঘুমের সময় মস্তিষ্কের বর্জ্য বের করতে সাহায্য করে। পৃথক পৃথক স্নায়ু কোশের এই তরঙ্গ মস্তিষ্কের ঘন কলার মধ্যে দিয়ে তরল প্রবাহিত করতে সহায়তা করে, এবং কলাগুলো পরিচ্ছন্ন করে। প্যাথলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি বিভাগের লি-ফেং জিয়াং-জি-র মতে এই স্নায়ু কোশ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাম্প হিসেবে কাজ করে। স্নায়ু কোশের ছন্দবদ্ধ ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে মস্তিষ্কে তরল প্রবাহিত হয় এবং আবর্জনা অপসারণ হয়। অ্যালঝাইমার এবং পারকিনসন রোগের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বর্জ্য – যেমন বিপাকীয় বর্জ্য এবং জাঙ্ক প্রোটিন মস্তিষ্কে জমা হয় এবং নিউরোডিজেনারেশন বা স্নায়ু কোশের ক্ষতি হয়। সুতরাং এই প্রক্রিয়াটির মাধ্যমে স্নায়বিক রোগ বিলম্বিত বা প্রতিরোধ করার সম্ভাবনা রয়েছে। মস্তিষ্কের কোশ আমাদের চিন্তন, অনুভূতি এবং শরীরের গতিবিধি পরিচালনা করে এবং আমাদের স্মৃতিশক্তি নির্মাণ ও সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে। কিন্তু এই ধরনের শক্তি-চাহিদামূলক কাজ সম্পাদন করতে, মস্তিষ্কের কোশের জ্বালানী প্রয়োজন। খাদ্য থেকে পুষ্টি গ্রহণের এই প্রক্রিয়ায় বিপাকীয় বর্জ্য তৈরি হয়। মস্তিষ্কের এই বিপাকীয় বর্জ্য নিষ্কাশণ গুরুত্বপূর্ণ। গবেষকদের মতে মানুষের জাগ্রত অবস্থাকালীন যে বর্জ্য এবং বিষাক্ত পদার্থ জমে থাকে তা নিষ্কাশণের জন্য ঘুমের সময় মস্তিষ্ক একটি প্রক্রিয়া শুরু করে। কিন্তু তা কীভাবে সংঘটিত হয় তা অজানা ছিল।
মস্তিষ্কের বর্জ্য অপসারণ করা কোন সহজ কাজ নয়। সেরিব্রোস্পাইনাল তরল বা ইংরেজিতে যাকে বলে সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড বা সিএসএফ মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ডে থাকা এক ধরনের স্বচ্ছ ও বর্ণহীন বহিঃকোষীয় তরল। যখন এই সেরিব্রোস্পাইনাল তরল পদার্থ মস্তিষ্কের মধ্য দিয়ে যায় তখন তা চারপাশে থেকে বিষাক্ত বর্জ্য সংগ্রহ করে। মস্তিষ্ক থেকে বেরিয়ে আসার পরে, এই দূষিত তরল মাথার খুলির নীচে মস্তিষ্কের বাইরের আবরণ বা ডুরা ম্যাটারের লসিকা নালীতে প্রবাহিত হওয়ার আগে একটি বেরিয়ারের মধ্যে দিয়ে যায়। কিন্তু মস্তিষ্কের মধ্যে এবং বাইরে এই তরল চলাচলের শক্তি কী?
ঘুমন্ত ইঁদুরের মস্তিষ্ক অধ্যয়ন করে, গবেষকরা দেখেছেন যে স্নায়ু কোশ মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক সংকেতের মাধ্যমে তরঙ্গ উৎপন্ন করে আর এই তরঙ্গ তরলটিকে চলতে সাহায্য করে। এই তরঙ্গ ব্যতীত সেরিব্রোস্পাইনাল তরল মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় না এবং আটকে থাকা বর্জ্য মস্তিষ্কের কলা থেকে নিষ্কাশিত হতে পারে না।