বিশ্ব ক্রমাগত ঘূর্ণিঝড় ও তার ক্রমবর্দ্ধমান তীব্রতার সম্মুখীন হয়ে চলেছে। দেখা যায় একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় অল্প সময়ের মধ্যে নাটকীয়ভাবে তীব্র হয় যেমন ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা ৩০ নট বা তার বেশি গতিতে বৃদ্ধি পায় এবং ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে এটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সেন্টার ফর ওশান ইনফরমেশন সার্ভিসেস (INCOIS)- এর বিজ্ঞানীরা। আবহাওয়া ও সমুদ্রবিদ্যা বিভাগের গবেষকদের সহযোগিতায় কলেজ অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বিশাখাপত্তনম,পরিচালিত সর্বশেষ গবেষণায়, বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন যে বৈশ্বিক উষ্ণতা ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বাড়িয়েছে, নানা ভাবে তীব্রতা বেড়ে গিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের আচরণ অনির্দিষ্ট হয়ে পড়ছে। গবেষকরা বলেছেন যে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়গুলি বেশ ঘন ঘন দ্রুত ঘনীভূত হচ্ছে। তাদের জীবনচক্রের মধ্যেও পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। পূর্বে, এই হঠাৎ তীব্রতা ঘূর্ণিঝড়ের প্রাথমিক পর্যায়ে ঘটত, কিন্তু এখন, সমুদ্রের উষ্ণায়নের সাথে, ঝড়ের পরিণত পর্যায়েও তীব্রতা বাড়ছে। গত ২০ বছরে একাধিক দ্রুত তীব্রতা গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের বর্ধিত সংখ্যার ভিত্তিতে দলটি উত্তর পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের অববাহিকা জুড়ে একাধিক দ্রুত ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি হতে দেখেছেন, যা বিশ্বের মোট ঝড়ের প্রায় অর্ধেক সংখ্যক তবে ভারত মহাসাগরের উত্তর অববাহিকায় এই ঝড়ের প্রকোপ তুলনামূলকভাবে কম। তারা জানিয়েছেন ড্রোনের মতো নতুন পর্যবেক্ষণমূলক কৌশল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে এই ঝড়ের গতিবিধির আঁচ আগে থেকে পাওয়া যাবে, যা অনিশ্চয়তা কমাতে সাহায্য করবে।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে ঘূর্ণিঝড় বিবর্তনের বিভিন্ন পর্যায়ে এবং সময়ের সাথে তীব্রতা হারের তারতম্য পরীক্ষা করলে এই ধরনের ঘটনা কখন কীভাবে ঘটবে তা সঠিকভাবে বুঝতে সাহায্য করবে। নৃতাত্ত্বিক কারণে জলবায়ু পরিবর্তন থেকে মহাসাগরের পৃষ্ঠদেশের উষ্ণতা শক্তিশালী গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়কে আরও বাড়তে সাহায্য করছে। সাম্প্রতিক জলবায়ু পরিবর্তন এবং এই ঘূর্ণিঝড়গুলির দ্রুত তীব্রতা বৃদ্ধির পিছনে কারণগুলির মধ্যে একটি সম্পর্ক টানতে আরও গবেষণা প্রয়োজন বলে তারা জানিয়েছেন। সর্বজনীনভাবে ব্যবহার করতে পারবে এমন একটা ডেটাসেট তৈরি করতে দলটি ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত সাম্প্রতিক এবং ঐতিহাসিক তথ্য একাধিক সংস্থা থেকে সংগ্রহ করেছে, যেমন ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (উত্তর আটলান্টিক এবং পূর্ব-উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় অববাহিকাগুলির জন্য) এবং জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার (অন্যান্য স্থানে ঝড়ের জন্য) থেকে সার্বজনীনভাবে পাওয়া যায় এমন গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় ডেটা তারা ব্যবহার করেছেন। তারপর সমস্ত বৈশ্বিক সমুদ্র অববাহিকা জুড়ে ৪০ বছরের (১৯৮১ থেকে ২০২০ অবধি) ঝড়ের তীব্রতা বিশ্লেষণ করেছেন। এই গবেষণাটি উপকূলীয় সম্প্রদায় এবং অবকাঠামো সংরক্ষণের জন্য আরও ভাল পূর্বাভাস এবং প্রস্তুতির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরতে পারবে বলে তারা আশাবাদী।