উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত অপরিহার্য তেল (EOs) নানা শিল্প যেমন ডিটারজেন্ট, প্রসাধনী, ফার্মাকোলজি এবং খাদ্যের গুণগত মান বাড়াতে, বা খাদ্য সংরক্ষণের জন্য মেশানো হয়। উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত এই তেল যেমন নিরাপদ তেমন তাদের জৈব ক্রিয়াকলাপ মানব স্বাস্থ্যকে উপকৃত করে। এই তেলগুলো নিউরোটক্সিনকে প্ররোচিত করে পোকামাকড় প্রতিরোধী ক্ষমতা দেখায়। উদ্ভিজ্জ এই তেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে টারপিনয়েড পাওয়া যায়, যা উদ্ভিদের প্রতিরোধী জিনের অভিব্যক্তি নিয়ন্ত্রণ করে উদ্ভিদের প্রতিরোধী ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সয়াবিন গাছ যখন পুদিনা গাছের কাছে চাষ করা হয় তখন দেখা গেছে সয়াবিন তৃণভোজীদের দূরে সরিয়ে রাখতে পারছে। পুদিনা থেকে একটা উদ্বায়ী যৌগ নির্গত হয়, যা প্রতিরক্ষামূলক জিনকে সক্রিয় করে, তৃণভোজীদের ঠেকিয়ে রাখে।
টোকিও ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স (TUS) এর বায়োলজিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক জেনারেল-ইচিরো আরিমুরার নেতৃত্বে একদল গবেষক টমেটোর প্রতিরক্ষা প্রতিক্রিয়া সক্রিয় করার জন্য ১১টা উদ্ভিজ্জ তেলের কার্যকারিতা মূল্যায়ন করেছেন। এদের ফলাফল জার্নাল অফ এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড ফুড কেমিস্ট্রিতে প্রকাশিত হয়েছিল। সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহৃত এই তেলের উপাদান কীটপতঙ্গ প্রতিরোধের জন্য উদ্বায়ী যৌগ হিসেবে কাজ করে। তারা টমেটো গাছে টারপিনয়েড-সমৃদ্ধ EO-এর প্রভাব দেখেছেন। টমেটো গাছের পাত্রের মাটিতে ১১টা ভিন্ন উদ্ভিজ্জ তেলের ইথানল-মিশ্রিত দ্রবণ প্রয়োগ করে, পাতার টিস্যুর অভ্যন্তরে জিনের অভিব্যক্তি তারা অধ্যয়ন করেন। গবেষকরা আণবিক বিশ্লেষণ করে লক্ষ করেন গোলাপের তেল (REO) PIR1 এবং PIN2 এর ট্রান্সক্রিপ্টের মাত্রা বাড়িয়েছে, এই জিনদুটো উদ্ভিদের প্রতিরক্ষার সাথে যুক্ত। REO দেওয়া টমেটো গাছগুলোর পাতায় স্পোডোপ্টেরা লিটুরা (মথের এক প্রজাতি) লার্ভা এবং টেট্রানাইকাস উরটিসি (এক ধরনের মাইট) কম ক্ষতি করতে পেরেছে। ফিল্ডের ক্ষেত্রে দেখা গেছে কীটপতঙ্গ থেকে টমেটো গাছের ক্ষতি ৪৫.৫% হ্রাস পেয়েছে। গবেষকদের ধারণা শীত ও বসন্তে এটা রাসায়নিক কীটনাশকের বদলি হতে পারে, আর গরমে এটা কীটনাশকের ব্যবহার ৫০% কমাবে। REO, β-citronellol সমৃদ্ধ, যা কীতপতঙ্গ তাড়ায়। অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে যে কম ঘনত্বের REO, টেট্রানাইকাস উরটিসি-কে তাড়াতে পারেনি কিন্তু ফাইটোসেলিয়াস পারসিমিলস নামক মাকড়সা শিকারীকে আকৃষ্ট করেছে। অর্থাৎ গাছ রক্ষা করতে এই REO-এর দ্বৈত কার্যকারিতা দেখা যাচ্ছে। চাষে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, কিন্তু তার থেকে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হয়। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আরও খাদ্য শস্যের চাহিদা, সেক্ষেত্রে গাছ রক্ষা করতে এই ধরনের উদ্ভিজ্জ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা খুবই প্রয়োজনীয়।