গৃহস্থালি পরিষ্কারের পণ্যে বিপজ্জনক যৌগ রয়েছে, যা শুধু স্বাস্থ্যের ক্ষতি করবে তাই নয় বায়ু দূষণও করবে। পরিবেশবান্ধব এবং সুবাস-মুক্ত পণ্য নিরাপদ বিকল্প বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। কেমোস্ফিয়ার নামে এক জার্নালে সম্প্রতি এই খবর প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণায় বিবিধ কাজে ব্যবহৃত পরিষ্কারের সরঞ্জাম বা ক্লিনার, গ্লাস ক্লিনার, ঘর বা শৌচালয় সুবাসিত করার এয়ার ফ্রেশনার এবং আরও বিভিন্ন পরিষ্কারের পণ্য সহ ৩0টি ক্লিনার বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত পণ্য শত শত বিপজ্জনক উদ্বায়ী জৈব যৌগ বা ভোলাটাইল অরগ্যানিক কম্পাউণ্ডস নির্গত করতে পারে, যা VOC নামে পরিচিত। গবেষকরা প্রচলিত পণ্য এবং পরিবেশবান্ধব পরিষ্কারের পণ্য উভয়ই পরীক্ষা করেছেন এবং ৩০ টি পণ্যের মধ্যে মোট ৫৩০ টি উদ্বায়ী জৈব যৌগ শনাক্ত করেছেন। এর মধ্যে, ১৯৩টি উদ্বায়ী জৈব যৌগ বা ভিওসি বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে যা শ্বাসযন্ত্রের ক্ষতি করে, ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে এবং বিকাশ ও প্রজননেও প্রভাব ফেলে। পরিষ্কারের সরঞ্জামের মধ্যে থাকা ভিওসি ঘরের ভিতরে এবং বাইরে বাতাসের গুণমানকে প্রভাবিত করে। কিন্তু তা বাইরের বাতাসের চেয়ে ঘরের ভিতরের বাতাসকে দুই থেকে পাঁচ গুণ বেশি দূষিত করে, আবার কারো কারো অনুমান এটি ১০ গুণ বেশি দূষণ করে। কিছু পণ্য দিন, সপ্তাহ এমনকি সারা মাস ব্যাপী ভিওসি নির্গত করে। EWG-র এক সিনিয়র টক্সিকোলজিস্ট অ্যালেক্সিস টেমকিন বলেছেন, গবেষণাটি পণ্যের খরিদ্দার, গবেষক এবং নিয়ন্ত্রকদের জন্য অভ্যন্তরীণ বাতাসে প্রবেশ করা অসংখ্য রাসায়নিকের জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহ্বান করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সংক্রান্ত কাজে যুক্ত বহু মানুষের হাঁপানি হওয়ার ঝুঁকি ৫০% বেশি এবং দীর্ঘস্থায়ী অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি রোগের ঝুঁকি প্রায় ৪৩% বেশি। এই ক্ষেত্রে কর্মরত মহিলারাও ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকির সম্মুখীন হন। শিশুদের স্বাস্থ্যও বিপন্মুক্ত রাখা যায়নি। কিছু সমীক্ষায় দেখা গেছে যে জরায়ুতে থাকার সময় এবং শৈশবকালে নির্দিষ্ট ইনডোর ক্লিনারের বেশি ব্যবহার শৈশবে হাঁপানি এবং শ্বাসকষ্টের আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে। গবেষণায় প্রকাশিত ফলাফল শুধুমাত্র মানব স্বাস্থ্যে নয়, পরিবেশের উপরেও প্রভাব ফেলে। ২০১৮ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে বায়ু দূষণের জন্য দায়ী অর্ধেক উদ্বায়ী জৈব যৌগ বা ভিওসি এই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সরঞ্জাম থেকে আসে। গবেষকরা তাই পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহারের আবেদন রেখেছেন যা আবালবৃদ্ধবনিতার সুস্বাস্থ্যের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।