ইনসুলিন হল অগ্ন্যাশয় থেকে তৈরি হওয়া এক প্রাকৃতিক হরমোন, এটা শরীরের শক্তি জোগাতে গ্লুকোজ ব্যবহার করতে দেয়। যদি অগ্ন্যাশয় পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে, বা শরীর সঠিকভাবে ইনসুলিন ব্যবহার না করতে পারে, তাহলে রক্তে শর্করার মাত্রা উচ্চ হয়ে যায়, ফলে ডায়াবেটিস হয়। ১৯২১ সালে প্রথম ডায়াবেটিসে ইনসুলিনের ভূমিকা আবিষ্কৃত হয়েছিল, এবং বহু বছর ধরে ডায়াবেটিস রোগীদের গবাদি পশু এবং শূকরের অগ্ন্যাশয় থেকে উৎসারিত ইনসুলিন দিয়ে চিকিত্সা করা হত। ১৯৭৮ সালে জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারড ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়া থেকে প্রোটিন ব্যবহার করে প্রথম ‘মানব’ ইনসুলিন তৈরি হয়েছিল। বর্তমানে ব্যাকটেরিয়ার পরিবর্তে ইস্ট ব্যবহার করে অনুরূপ প্রক্রিয়ায় ইনসুলিন তৈরি করা হয়।
ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় আরবানা-চ্যাম্পেইনের প্রাণী বিজ্ঞানী ম্যাট হুইলারের নেতৃত্বে এক দল গবেষক মানুষের ডিএনএ-র প্রোইনসুলিন কোডিং হয়, এমন অংশ ১০ টা গরুর ভ্রূণের কোশের নিউক্লিয়াসে প্রবিষ্ট করেন। প্রোইনসুলিন প্রোটিন ইনসুলিনে রূপান্তরিত হয়। এরপর এই দশটা ভ্রূণ স্বাভাবিক গরুর গর্ভে প্রবেশ করানো হয়। এই জিনগতভাবে পরিবর্তিত ভ্রূণগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র একটা গর্ভাবস্থায় পরিপূর্ণতা পায়। যার থেকে স্বাভাবিকভাবে এক জীবিত ট্রান্সজেনিক বাছুর জন্মায়। ট্রান্সজেনিক বাছুরটা গাভীতে রূপান্তরিত হওয়ার পর গবেষকরা কৃত্রিমভাবে, আইভিএফ পদ্ধতিতে এমনকি প্রাকৃতিকভাবেও এই গরুকে গর্ভধারণ করানোর চেষ্টা করে বিফল হন। সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণী প্রজনন প্রযুক্তিবিদ পিয়েত্রো বারুসেলির সহায়তায় হরমোন থেরাপির মাধ্যমে গরুটা অল্প দুধ উৎপাদন করেছিল।
এক মাসের মধ্যে গরুটা যে সামান্য দুধ দিয়েছিল, ওয়েস্টার্ন ব্লটিং এবং ভর স্পেকট্রোমেট্রি ব্যবহার করে গবেষকরা তাতে ইনসুলিনের নির্দিষ্ট প্রোটিন সন্ধান করেছিলেন। ওয়েস্টার্ন ব্লটিং মানব প্রোইনসুলিন এবং ইনসুলিনের অনুরূপ আণবিক ভরের দুটো ব্যান্ড প্রকাশ করেছে, যা ট্রান্সজেনিক গরু বাদে অন্য গরুর দুধে পাওয়া যায়নি। ভর স্পেকট্রোমেট্রি সি-পেপটাইডের উপস্থিতি নির্দেশ করে যা ইনসুলিন তৈরির প্রক্রিয়ায় মানুষের প্রোইনসুলিন থেকে বেরিয়ে যায়। সম্ভবত গরুর দুধের এনজাইম ‘মানব’ প্রোইনসুলিনকে ইনসুলিনে রূপান্তরিত করেছে। হুইলার জানিয়েছেন, তাদের উদ্দেশ্য ছিল প্রোইনসুলিন তৈরি করে তার থেকে ইনসুলিন নিষ্কাশন করা। কিন্তু গরুর মধ্যে এটা নিজে থেকেই হয়েছে। হুইলারের হিসেব অনুযায়ী একটা গরু থেকে প্রতি লিটার দুধে এক গ্রাম ইনসুলিন তৈরি হতে পারে, যা দিয়ে আঠাশ হাজারের বেশি ইনসুলিনের ইউনিট তৈরি করা যাবে। বায়োটেকনোলজি জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধে হুইলারের আশা ভবিষ্যতে আরও গবেষণায় এধরনের গরুর পাল তৈরি করা যেতে পারে, যারা একটা দেশের ইনসুলিনের চাহিদা জোগান দিতে সক্ষম হবে।