ব্যাসিলাস সেরিয়াস নামের এক ব্যাকটেরিয়া থেকে খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়। রান্না করা খাবার ঘরের তাপমাত্রায় অনেক বেশি সময়ের জন্য রেখে দিলে সাধারণত এই বিষক্রিয়া দেখা দেয় আর কোনো ব্যক্তি এই খাবার খেলে তার যে রোগ হয় তার নাম “ফ্রাইড রাইস সিন্ড্রোম”। সম্প্রতি এক ২০ বছর বয়সী কলেজ ছাত্র এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। যদিও মৃত্যু বিরল, তবে খাবার সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না হলে খাবারে বি. সেরিয়াসের মতো ব্যাকটেরিয়া জন্মায় যার কারণে পেটের রোগ হতে পারে।
ব্যাসিলাস সেরিয়াস নামের এই ব্যাকটেরিয়া আমাদের আশপাশে সমগ্র পরিবেশেই পাওয়া যায়। রান্না করা খাবার সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না হলে নির্দিষ্ট খাবারে এটি প্রবেশ করে আর সমস্যা সৃষ্টি করে। ভাত এবং পাস্তার মতো স্টার্চি বা মাড় আছে এমন খাবারে প্রায়শই এরা প্রবেশ করে। তবে এটি অন্যান্য খাবারেরও ক্ষতি করতে পারে যেমন রান্না করা শাকসবজি এবং মাংস জাতীয় খাবার। কিছু ব্যাকটেরিয়া টক্সিন বা বিষ তৈরি করতে পারে। যে সমস্ত খাবার ঘরের তাপমাত্রায় রাখা অনুপযুক্ত সেগুলো বেশি সময় ধরে ঘরের তাপমাত্রায় রাখলে এই বিষাক্ত পদার্থ ওই খাবারে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা গড়ে ওঠে।
বি. সেরিয়াস সমস্যার সৃষ্টি করে কারণ এটি স্পোর নামে এক ধরনের কোশ তৈরি করে, যা তাপের প্রতি অনেক বেশি প্রতিরোধী। তাই যদি পড়ে থাকা খাবার উচ্চ তাপমাত্রায় গরম করা হয় তবে অন্যান্য ধরনের ব্যাকটেরিয়া মারা যেতে পারে কিন্তু যদি খাবারটি সেরিয়াস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা দূষিত হয় তবে তাপ এর উপর খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারে না। এই স্পোরগুলো মূলত সুপ্ত থাকে, তবে সঠিক তাপমাত্রা এবং পরিবেশে এরা বৃদ্ধি পায় ও সক্রিয় হয়ে ওঠে। তখন তারা বিষাক্ত পদার্থ তৈরি করতে শুরু করে যা আমাদের অসুস্থ করে তোলে। বি. সেরিয়াস দ্বারা সংক্রমণের লক্ষণের মধ্যে রয়েছে ডায়রিয়া এবং বমি। প্রকৃতপক্ষে, বি. সেরিয়াস সংক্রমণের দুটি প্রকার রয়েছে: একটিতে সাধারণত ডায়রিয়া হয় এবং অন্যটিতে বমি। কয়েক দিনের মধ্যে অসুস্থতা কমে যায়, কিন্তু যারা দুর্বল, যেমন শিশু বা যাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
খাবার রান্না করার পরে, পরবর্তী দিনে তা ব্যবহারের জন্য খাবার অবিলম্বে ফ্রিজে রাখা প্রয়োজন। খাবার ঠান্ডা হওয়ার জন্য অপেক্ষা করার দরকার নেই। এছাড়াও, অনেক পরিমাণে খাবার একসঙ্গে ফ্রিজে না রেখে তাকে ছোটো ছোটো ভাগে রাখলে ভালো হয়। একটি সাধারণ নির্দেশিকা হিসাবে, দু ঘন্টা/চার ঘন্টা নিয়ম অনুসরণ করা যেতে পারে। তাই যদি কোনো খাবার ফ্রিজের বাইরে দুই ঘণ্টার জন্য থাকে, তাহলে তা আবার ফ্রিজে রাখা নিরাপদ কিন্তু যদি এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য বাইরে থাকে, তাহলে এটি খেয়ে ফেলা শ্রেয় এবং তারপরে অবশিষ্টাংশ ফেলে দেওয়াই নিরাপদ। যদি খাবার চার ঘন্টার বেশি সময় ধরে বাইরে থাকে তবে ওই খাবার খাওয়া বেশ ঝুঁকির কাজ হতে পারে। খাদ্য নিরাপত্তার সাধারণ প্রবাদটি এখানে প্রযোজ্য: সন্দেহ থাকলে তা ফেলে দিন।