আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গেলে আমরা টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হই। টাইপ ২ ডায়াবেটিস যাকে আমরা ব্লাড সুগারও বলে থাকি সবচেয়ে সাধারণ ধরনের ডায়াবেটিস যাতে আজ লক্ষ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত। আমাদের শরীরে শক্তির প্রধান উৎস হল আমদের রক্তে উপস্থিত গ্লুকোজ যা প্রধানত আমাদের খাওয়া খাবার থেকে আসে। ইনসুলিন, অগ্ন্যাশয় দ্বারা তৈরি একটি হরমোন যা গ্লুকোজকে আমাদের কোশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে শক্তি রূপে ব্যবহার করতে সাহায্য করে। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে আমাদের শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করে না বা ইনসুলিন ভালোভাবে ব্যবহার করে না। তখন অত্যধিক গ্লুকোজ আমাদের রক্তে থেকে যায় এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে আমাদের কোশে পৌঁছায় না। টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের বিভিন্ন সচেতনতা অবলম্বন করে চলতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা জানেন যে তাদের খাবার চিনি এড়িয়ে চলতে হবে, তবে নতুন গবেষণা থেকে আজ জানা যাচ্ছে যে এদের লবণও এড়িয়ে চলতে হবে। মায়ো ক্লিনিক প্রসিডিংস-এ প্রকাশিত টুলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে খাবারে বেশি পরিমাণে লবণ খাওয়া টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। গবেষণা চলাকালীন গবেষকরা ইউকে বায়োব্যাঙ্কে নিবন্ধিত ৪০০,০০০ প্রাপ্তবয়স্কদের খাবারে লবণ গ্রহণের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছে। প্রায় ১২ বছরের মাঝামাঝি সময়ে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ১৩,০০০ ঘটনা নথিবদ্ধ হয়েছে। যারা “কখনো” বা “কদাচিৎ” লবণ ব্যবহার করেন তাদের তুলনায়, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা “কখনও কখনও,” “সাধারণত,” বা “সর্বদা” লবণ যোগ করে খাবার খান তাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ১৩%, ২০% এবং ৩৯% বেশি দেখা গেছে।
টুলেন ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক ডঃ লু-এর মতে আমরা ইতিমধ্যেই জানি যে লবণ সীমিত পরিমাণে ব্যবহার করলে হার্টের রোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি হ্রাস পায়, কিন্তু এই গবেষণায় প্রথমবার দেখা গেছে যে পরিমিত লবণ ব্যবহার টাইপ ২ ডায়াবেটিসও প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। বেশি পরিমাণে লবণ ব্যবহার কেন টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে তা নির্ধারণ করার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন। তার মতে খাবারে বেশি পরিমাণে লবণ থাকলে মানুষ আরও বেশি করে খাবার খেতে উৎসাহিত বোধ করে কারণ সেগুলো তার রসনাকে তৃপ্ত করে, এবং এর থেকেই স্থূলতা এবং প্রদাহের মতো সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। গবেষণায় ঘন ঘন লবণ খাওয়া এবং উচ্চ BMI এবং কোমর-থেকে-নিতম্বের অনুপাতের মধ্যে একটি সম্পর্ক পাওয়া গেছে। ডঃ লু আরো বলেন যে পরবর্তী ক্ষেত্রে এই বিষয়ের উপর ক্লিনিকাল ট্রায়াল পরিচালনা করতে হবে যাতে অংশগ্রহণকারীর লবণ খাওয়ার পরিমাণ এবং ক্ষতিকারক প্রভাব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়। তিনি সতর্ক করেছেন যাতে আমরা খুব শীঘ্রই খাবারে লবণের পরিমাণ সীমিত করি আর এই কাজ করা খুব একটা কঠিন নয়।