কাঁচা খাবারের ডায়েট সাম্প্রতিক এক প্রবণতা, যেখানে বিশ্বাস করা হয় খাবার যত প্রক্রিয়াজাত কম হবে ততই ভালো। তবে সব খাবারই কাঁচা খেলে বেশি পুষ্টিকর হয় না। প্রকৃতপক্ষে, কিছু শাকসবজি রান্না করার সময় আরও পুষ্টিকর হয়। স্টিমিং ভাপানো অথবা রোস্ট করার মতো রান্নার পদ্ধতিগুলি শাকসবজি যেমন টমেটো, মাশরুম এবং পালং শাকগুলিতে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ বাড়ায়। রান্না করলে কোনো কোনো সবজির কোশ প্রাচীরের মধ্যে আটকে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খাবারে যোগ হয়। যদিও রান্নার ফলে ভিটামিন সি এর মতো কিছু ভিটামিন কমে যায়, তবে সামগ্রিক পুষ্টি প্রায়শই বৃদ্ধি পায়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, হাড়ের বৃদ্ধি এবং ক্যান্সার প্রতিরোধের বাড়ায়।
পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং জিঙ্ক রয়েছে। পালংশাক রান্না করা হলে এই পুষ্টিগুলি সহজে শোষিত হয়। এর কারণ হল পালং শাকে অক্সালিক অ্যাসিড থাকে যা আয়রন এবং ক্যালসিয়ামের শোষণকে বাধা দেয়। পালং শাক গরম করার ফলে আবদ্ধ ক্যালসিয়াম মুক্ত হয়, যা শরীর সহজে শোষণ করতে সক্ষম হয়। যখন শতমূলী রান্না করা হয়, তখন এর কোশের দেয়াল ভেঙ্গে ভিটামিন এ, বি-9 (ফোলেট), সি এবং ই আরও বেশি পাওয়া যায়। এই ভিটামিনগুলি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, ত্বকের স্বাস্থ্য এবং কোশীয় ক্রিয়া বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আবার খোসা সহ গাজর সিদ্ধ করে রান্না করলে তাদের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শক্তি দ্বিগুণেরও বেশি হয়। তবে গাজর ভাজলে এর ক্যারোটিনয়েডের পরিমাণ কমে যায়। যেকোনো পদ্ধতি রান্না করলে টমেটোতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লাইকোপিন অনেক বেড়ে যায়। তাপ যা পুরু কোশের দেয়াল ভেঙে লাইকোপিন পরিমাণ বাড়ায়। লাইকোপিন হৃদরোগ এবং ক্যান্সার সহ বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কম করে। ক্যাপসিকাম রান্না করলে, তাদের কোশের দেয়াল ভেঙ্গে যায়, যা বিটা-ক্যারোটিন, বিটা-ক্রিপ্টোক্সানথিন এবং লুটেইনের মতো ক্যারোটিনয়েডগুলিকে আরও শোষণযোগ্য করে তোলে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি চোখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং ইমিউন সিস্টেমকে সমর্থন করার জন্য অত্যাবশ্যক। গবেষণায় দেখা গেছে যে ব্রোকলি, ফুলকপি জলে ভাপিয়ে নিলে ভিটামিন সি এবং মাইরোসিনেজ উভয়ই সংরক্ষিত হয় তাই, ক্যান্সার প্রতিরোধকারী যৌগগুলি এর থেকে পাওয়া যায়। একইভাবে, স্প্রাউট, যখন রান্না করা হয় তখন একটি যৌগ ইনডোল উৎপন্ন হয়, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে। স্প্রাউট রান্না করার ফলে গ্লুকোসিনোলেটগুলি এমন যৌগগুলিতে ভেঙে যায় যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। সবুজ বিনস যখন সেঁকা, মাইক্রোওয়েভ করা হয়, এমনকি ভাজা হয় তখন উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। সব সবজির ক্ষেত্রেই উচ্চ তাপমাত্রা, অতিরিক্ত রান্নার সময় এবং বেশি পরিমাণে জল পুষ্টি নষ্ট করে দেয়। জলে দ্রবণীয় ভিটামিন (সি এবং নানা বি ভিটামিন) রান্নার ক্ষেত্রে শাকসবজি থেকে বেরিয়ে জলে মিশে যায়। তাই এগুলি জলে কম ভিজিয়ে, রান্না করার সময় ন্যূনতম পরিমাণে জল ব্যবহার করে ভাপানো বা রোস্ট করা যেতে পারে। যদি রান্নার জল অবশিষ্ট থাকে তবে এটি স্যুপ বা গ্রেভিতে ব্যবহার করা যায়, কারণ এতে পুষ্টিকর নানা উপাদান থেকে যায়।