সিসিলিয়ান, হাত পা বিহীন, কৃমি-আকৃতির বা সাপের মতো দেখতে একধরনের উভচর প্রাণী। তারা বেশিরভাগই মাটিতে বা ঝরণার তলায় লুকিয়ে থাকে এবং একটা রহস্যময় জীবন যাপন করে । উভচরদের মধ্যে এরা সবচেয়ে কম পরিচিত। আধুনিক সিসিলিয়ানরা দক্ষিণ এবং মধ্য আমেরিকা, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে বাস করে। এরা কেঁচোর মতো ক্ষুদ্র ভূগর্ভস্থ প্রাণীদের খায়। সিসিলিয়ান মায়েরা তাদের বাচ্চাদের জন্য নিজের শরীরে একটা চর্বিযুক্ত ত্বকের স্তর তৈরি করে। বাচ্চারা মায়ের এই মোটা ত্বক দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে খায়। নতুন গবেষণায় জানা গেছে যে এর মাধ্যমে মায়েরা তাদের সন্তানদের জন্য শুধুমাত্র পুষ্টি সরবরাহ করে তাই নয়, জীবাণুও প্রদান করে । অনেক প্রাণীই কোনো না কোনোভাবে ‘পেরেন্টাল কেয়ারের’ মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে জীবাণু প্রেরণ করে বলে জানা যায়, কিন্তু উভচর প্রাণীর ক্ষেত্রে এই ঘটনার প্রথম প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া গেছে । গবেষকদের মতে অন্যান্য উভচর যেমন ব্যাঙ বা সালামান্ডার শুধুমাত্র ডিম পেড়ে চলে যায় তাদের মধ্যে পেরেন্টাল কেয়ারের মতো বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায় না। অন্যদিকে, সিসিলিয়ান ছানারা তাদের মায়ের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য যত্ন পায়। এমনকি মায়েদের ত্বক ছিঁড়ে খাওয়ানোর সময়কাল (বা মাতৃত্বকালীন ডার্মাটোফ্যাজি) শেষ হওয়ার পরেও, একজন মা এবং তার ছানারা প্রায়শই একসাথে থাকে। গবেষণায় এমনটাই দেখা গেছে।
ফ্লোরিডা মিউজিয়ামের হারপেটোলজি কিউরেটর, ডেভিড ব্ল্যাকবার্ন বলেছেন যে সিসিলিয়ানের জীববিজ্ঞান সম্বন্ধে বিশেষ কিছুই জানা যায়নি কারণ এদের বেশিরভাগ সময়ে খুঁজে পাওয়া কঠিন। এই গবেষণাটি সিসিলিয়ানদের নিয়ে সম্ভবত প্রথম প্রকাশিত গবেষণা। অপরদিকে ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের হারপেটোলজিস্ট মার্সেল টাল্লা কৌয়েট বলেছেন যেখনেই সিসিলিয়ানদের ডিম দেখা গেছে সেখানে সর্বদা মাকেও দেখা গেছে। কৌয়েট এবং তার সহকর্মীরা দেখেন মাতৃত্বকালীন ডার্মাটোফ্যাজি শুধুমাত্র খাদ্য সরবরাহের জন্য নয়, সম্ভবত শিশু সিসিলিয়ানদের প্রয়োজনীয় জীবাণু অর্জন করতে সহায়তা করে ঠিক যেমনটা মানব শিশু মায়ের দুধ থেকে জীবাণু অর্জন করে।