বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ও তার মাত্রা প্রতিবেশী গ্রহের সাথে তুলনা করে বিজ্ঞানীরা বাসযোগ্য গ্রহ এবং সম্ভাব্য বসবাসযোগ্য গ্রহ শনাক্ত করার এক নতুন উপায় তৈরি করেছেন। ইউনিভার্সিটি অফ বার্মিংহাম (ইউকে), ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি) এবং অন্যান্য জায়গার গবেষকদের একটি আন্তর্জাতিক দল দেখিয়েছেন যে প্রতিবেশী গ্রহের তুলনায় একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে CO2-এর পরিমাণ কম থাকলে, তবে বোঝা যাবে এই গ্রহের পৃষ্ঠে তরল জল উপস্থিত রয়েছে। CO2-এর মাত্রা কমে গেলে এটা প্রমাণ করে যে গ্রহের বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত কার্বন ডাই অক্সাইড মহাসাগরে দ্রবীভূত হচ্ছে বা একটি গ্রহের বায়োমাস তা গ্রহণ করছে। গবেষণাটি নেচার অ্যাস্ট্রোনমি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। বাসযোগ্যতা হল একটি তাত্ত্বিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের ধারণা যার অর্থ হল একটি মহাকাশীয় বস্তু তার পৃষ্ঠে তরল জল ধরে রাখতে সক্ষম। যে কোনো সৌরজগতে নক্ষত্রের খুব কাছের গ্রহগুলো খুব গরম হয় যেমন শুক্র, আর যেগুলো খুব দূরে থাকে যেমন মঙ্গল গ্রহ খুব ঠান্ডা, অন্যদিকে মাঝামাঝি থাকা ‘বাসযোগ্য অঞ্চলের’ গ্রহগুলোর তাপমাত্রা আদর্শ। বাসযোগ্য অঞ্চলকে কখনও কখনও গোল্ডিলক্স অঞ্চল হিসাবে উল্লেখ করা হয়। একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ পরিমাপ করা বেশ সহজ। এর কারণ হল CO2 হল ইনফ্রারেডের একটি শক্তিশালী শোষক, এর কারণে পৃথিবীতে বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধি ঘটে। বিভিন্ন গ্রহের বায়ুমণ্ডলে CO2-এর পরিমাণ তুলনা করে, গবেষকরা চিহ্নিত করতে পারেন কোন গ্রহে সমুদ্র রয়েছে এবং তা জীবনকে সমর্থন করতে সক্ষম কিনা। গবেষকরা একটি নতুন হ্যাবিটেবিলিটি সিগনেচার বা বাসযোগ্যতার চিহ্ন তৈরি করেছেন যার সাহায্যে তারা শনাক্ত করতে পারে যে কোনও গ্রহে সত্যিই জল রয়েছে কিনা। এর আগে, বিজ্ঞানীরা একটি গ্রহের পৃষ্ঠে তরল শনাক্ত করতে তার জ্বলজ্বল করা বা কীভাবে তারার আলো জল থেকে প্রতিফলিত হয় তা থেকে বুঝতে পারত। আমরা জানি যে প্রাথমিকভাবে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বেশিরভাগই CO2 ছিল, কিন্তু তারপরে কার্বন সমুদ্রে দ্রবীভূত হয়েছিল এবং গ্রহটিকে গত চার বিলিয়ন বছর বা তারও বেশি সময় ধরে জীবনকে সমর্থন করতে সক্ষম করেছে। অন্যান্য গ্রহের বায়ুমণ্ডলে CO2-এর মাত্রা পরীক্ষা করে গবেষকরা পরীক্ষামূলকভাবে বাসযোগ্যতা পরিমাপ করতে পারে এবং তাদের তাত্ত্বিক প্রত্যাশার সাথে তুলনা করতে পারে। আমরা পৃথিবীতে যে জলবায়ু সংকটের মুখোমুখি হচ্ছি তার পরিপ্রেক্ষিতে কার্বনের কোন মাত্রা গ্রহকে বসবাসের অযোগ্য করে তোলে তা খুঁজে বের করতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, শুক্র এবং পৃথিবীকে অবিশ্বাস্যভাবে একই রকম দেখতে হলেও শুক্রের বায়ুমণ্ডলে খুব উচ্চ স্তরের কার্বন রয়েছে। অতীতে হয়তো কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ে কার্বনের মাত্রা শুক্রকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছিল। গবেষণা দলের পরবর্তী পদক্ষেপটি হল এক্সোপ্ল্যানেটের বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ শনাক্ত করা, তাদের পৃষ্ঠে কোনো মহাসাগর রয়েছে কিনা তা শনাক্ত করা এবং যে গ্রহ জীবনকে সমর্থন করতে পারে তাদের আরও পর্যবেক্ষণকে অগ্রাধিকার দিতে সহায়তা করা।