আমরা প্রায়শই দেখি আমাদের বারান্দার আলোর চারপাশে অনেক পতঙ্গ গোল গোল হয়ে উড়ছে। আবার আমরা দেখেছি কালীপুজোর সময় শ্যামাপোকার প্রকোপ বেড়ে যায় আর এই শ্যামাপোকাও আলোর উদ্দেশ্যে ধায়। লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের অধ্যাপক স্যামুয়েল ফেবিয়ান এবং তাঁর সহযোগীরা গবেষণা করছেন প্রদীপ বা ওই ধরনের কৃত্রিম আলোর প্রতি পোকারা বেশি আকৃষ্ট হয় কেন? এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে গবেষকরা দেখেন যে বহু পুরনো ধারণা রয়েছে যা বাতিল করা যায় যেমন উড়ন্ত পোকামাকড় কৃত্রিম আলোয় অন্ধ হয়ে যায় এবং আলোর দিকে ছুটে যায় ও আটকে পড়ে অথবা আলোর উত্সকে তাদের পালিয়ে যাওয়ার পথ হিসেবে ভাবতে থাকে বা চাঁদের আলো দেখে নিজেদের গতিপথ নির্ধারণ করে। ফেবিয়ান এবং তাঁর সহযোগীরা মনে করেন এ সবই ভিত্তিহীন, কেন পোকারা কৃত্রিম আলোয় অন্ধ হয়, তার সদুত্তর বিশেষজ্ঞরা দিতে পারেননি।
উচ্চ-গতির ইনফ্রারেড ক্যামেরা থেকে সংগ্রহ করা তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে যে এই বৃত্তাকারে উড়তে থাকা পোকামাকড় আলোর দ্বারা আকৃষ্ট হয় না বরং তারা পথ হারিয়ে ফেলে। এমন কথাই জানা যাচ্ছে নেচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত এই গবেষণাপত্র থেকে। আমরা জানি মথ এবং অন্যান্য পতঙ্গ স্বাভাবিকভাবেই আলোর থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। কিন্তু পতঙ্গরা যখন কৃত্রিম আলোর উৎসের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তখন তাদের দিকনির্দেশনার বোধ খুব অদ্ভুত হয়ে পড়ে। কোথায় মাটি রয়েছে তার দিশা হারিয়ে, পতঙ্গরা বৃত্তে উড়তে উড়তে শেষে মাটির দিকে ধেয়ে যায়। এর ফলে তারা আলোর সাথে ধাক্কা খায় এবং কৃত্রিম আলোর উপর পড়ে পোকারা মারা যায় যা খুবই বিচিত্র। ফ্যাবিয়ান এবং সহকর্মীরা পর্যবেক্ষণ করে কীভাবে কৃত্রিম আলো বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়ের ওড়াকে প্রভাবিত করে। তারা দেখেন পতঙ্গরা ঝুলন্ত বা স্থায়ী আলোর চারপাশে অবিরাম প্রদক্ষিণ করে চলেছে। আবার কিছু কিছু পতঙ্গ উপরে আলোর দিকে উড়তে থাকে যতক্ষণ না তারা আর উঁচুতে উড়তে পারেনা, তারপর তাদের গতি কমতে থাকে এবং শেষে উল্টো পথে মাটির দিকে ধাবিত হয়। গবেষকরা দেখেন যে ওড়ার সময়, পোকামাকড় ক্রমাগতভাবে আলো দিকে পিছন ফিরে থাকে। পরীক্ষাগারে পর্যবেক্ষণ করা মথ এবং ড্রাগনফ্লাইয়ের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ফ্যাবিয়ান এবং সহকর্মীরা তাই অনুমান করেন পোকামাকড়রা পালানোর পথের খোঁজে আলোর দিকে ধেয়ে যায় না বা আলোকে দিকনির্দেশনার উৎস হিসেবেও ব্যবহার করে না। যখন পোকারা আলোর উপর থেকে আলোর দিকে ধায়, তখন পোকারা পিঠ দিয়ে পড়তে থাকে। আলোর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আলোর চার পাশে আবর্তন করতে থাকে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে আকাশের মতো যখন কৃত্রিম আলোর অবস্থান মাটির বিপরীতে ছিল তখন পতঙ্গের ওড়া স্বাভাবিক ছিল। যখন গবেষকের দল মেঝেতে একটি সাদা চাদর আলোকিত করে রেখেছিল তখন পতঙ্গগুলো আলোর সাথে ধাক্কা খাচ্ছিল কিন্তু মাথার উপরে একটি সাদা চাদর যখন ছাউনিরূপে টাঙিয়ে আলোকিত করা হয়েছিল তখন পতঙ্গরা আলোতে আটকা না পড়েই উড়ে গিয়েছিল।