আমরা যদি দেখি একটি শিশু তার প্রথম জন্মদিনের কেকের চকচকে মোমবাতির দিকে বা প্রথম যখন গাড়ি দেখছে তার দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, তখন এটা স্পষ্ট যে তার বড়ো, নিষ্পাপ চোখের পিছনে কিছু একটা ঘটছে। আমরা ঘড়ির কাঁটা ঘোরার বিপরীতে গিয়ে যদি দেখি, কৌতূহলী শিশু থেকে নবজাতক বা আরও পেছনে গিয়ে নিষিক্ত ডিম পর্যন্ত, সেই সচেতনতাকে চিনতে পারা ক্রমশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে। চেতনাকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করা বিজ্ঞানীদের কাছে কঠিন হয়েছে কারণ নিউরনের একটি বিকাশমান জালক শুধুমাত্র ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয়, তাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থা কীভাবে উপলব্ধি করছে তা বোঝা বেশ জটিল।
বেইন এবং অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আয়ারল্যান্ডের স্নায়ুবিজ্ঞানী এবং দার্শনিকদের একটি ছোটো দল আজ পর্যন্ত চেতনার ওপরে বিভিন্ন লিটেরচর পর্যালোচনা করেছেন। তাদের অনুসন্ধান অনুসারে, সচেতনতা জন্মের অনেক আগে থেকেই কাজ করতে শুরু করতে পারে। চেতনা স্নায়ুবিদ্যার ব্ল্যাক হোল; বিষয়গত অভিজ্ঞতার ঘটনা থেকে এটি সৃষ্টি হয় যার নাগাল অন্য কেউ পায় না। আমরা আমাদের নিজস্ব কিছু বিষয় অন্যভাবে মস্তিষ্কের মাধ্যমে অনুমান করতে পারি, যেমন শাব্দিক কম্পন আনন্দ এবং দুঃখের গানে প্রকাশ পায়, আবার ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ নীল আকাশে বা সূর্যাস্তে অথবা ত্বকের গন্ধ থেকে মা কে চেনা ইত্যাদি বিষয়ে আমরা অনুভব করি।
এই পর্যালোচনায় গবেষকরা প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন যে জন্মের কাছাকাছি চেতনার বিকাশ হয়, মস্তিষ্ক জুড়ে উন্নত সংযোগ, মনোযোগের সূচক, বিভিন্ন ইন্দ্রিয় থেকে তথ্যের একত্রীকরণ, বিস্ময় এবং মনোযোগের পুনর্নির্মাণ জড়িত থাকে। গবেষকদের অনুসন্ধান থেকে বোঝা যায় যে নবজাতকরা সংবেদনশীল এবং বিকাশমান জ্ঞানীয় প্রতিক্রিয়াগুলি ব্যবহার করে সুসংগত সচেতন অভিজ্ঞতার সাথে অন্যদের ক্রিয়াগুলি বোঝে এবং তাদের নিজস্ব প্রতিক্রিয়াগুলির পরিকল্পনা করে। এর মানে এই নয় যে জন্মের সময় হঠাৎ করেই চেতনা চালু হয়ে যায়, কিন্তু অভিজ্ঞতার ক্রমশ জাগরণ হয়, যেখানে সাইন্যাপ্স একত্রিত হয়, ইন্দ্রিয় মিশ্রিত হয়ে জ্ঞান ও বুদ্ধি দিয়ে এমন মডেল তৈরি করে যা নতুন উদ্দীপনার উপস্থিতিতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়।
গবেষকরা জানিয়েছেন, সচেতনতা টুকরো টুকরো বা সম্পূর্ণ কিনা, ভ্রূণ স্বপ্ন দেখে কিনা, কীভাবে একটি নবজাতকের নিজের সচেতনতার সাথে সম্পর্কিত করতে পারি, তার উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। মস্তিষ্কের স্ক্যানিং কৌশলগুলো উন্নত হলে এবং স্নায়বিক নেটওয়ার্কের জটিল বুননগুলো আরও ভালভাবে ম্যাপ করতে পারলে, গবেষকরা চেতনা বিকাশের ধারাবাহিকতা ভালোভাবে বুঝতে সক্ষম হবেন।