১৯৭২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবেশ ভাবনার আন্তর্জাতিক সূচনা এবং ১৯৭৪ সাল থেকে প্রত্যেক ৫ ই জুন সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ আন্তর্জাতিক পরিবেশ বার্তা ঘোষণা করে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য। কিন্তু পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়েই চলেছে।
২০২২ সালে পরিবেশ বার্তা ঘোষিত হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে – একটি মাত্র পৃথিবী। বার্তাটির মধ্য থেকে প্রকাশিত হয়েছে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সাবধান বাণী তথা হতাশা। কারণ এখন থেকে ২০ বছর আগে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের বার্তা ছিল ‘পৃথিবী কে একটি সুযোগ দাও’। ২০০৩ -এ পরিবেশ বার্তায় ঘোষিত হল ২০০ কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ জলের অভাব! অতীতে ফিরে গেলে দেখা যাবে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ বারবার মানবজাতিকে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করেছে, কিন্তু ভোগবাদী সমাজ ব্যবস্থা মানুষকে ক্রমাগত নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ১৯৭৪ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক বার্তা ছিল ‘শুধু একটি পৃথিবী’। তারপর ৪৮ বছর অতিক্রান্ত। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জকে পুনরায় মানবজাতিকে মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে এইরকম সবুজ পৃথিবী বা মানুষের বসবাসযোগ্য পৃথিবী আর কোথাও নেই।
প্রতিবছর জনসংখ্যা বর্ধিত হচ্ছে, মিষ্টি জলের ভাণ্ডার সংকুচিত হচ্ছে, নদীগুলি দূষিত হচ্ছে, এমনকি সমুদ্রও দূষণে আক্রান্ত। ব্যাপক বনাঞ্চল ধ্বংস ত্বরান্বিত করছে পৃথিবীর উষ্ণায়নকে। বর্ধিত উষ্ণায়নের ফলে ক্রমাগত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। বিশেষ করে সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত জনবসতি আজ এক চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে, কারণ সমুদ্র নিকটবর্তী স্থলভূমিকে গ্রাস করছে, ছোট ছোট দ্বীপ গুলি সমুদ্রের গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আমাদের রাজ্যে সুন্দরবনের দ্বীপবাসী জীবনকে বাজি রেখে বসবাস করছেন কারণ তারা বুঝতেই পারছেন আগামী দিনে তারা পরিবেশ উদ্বাস্তুতে পরিণত হবেন।
পৃথিবী জুড়ে উষ্ণায়নের ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় আজ এক অবধারিত সত্য। কিন্তু এরই মধ্যে পৃথিবী জুড়ে যুদ্ধ এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি। পৃথিবী জুড়ে আনবিক অস্ত্র তৈরির জন্য যে সমস্ত ধ্বংসাত্মক কাজ ক্রমাগত সংগঠিত হচ্ছে তার বিষময় ফলে আজ আক্রান্ত পরিবেশ, আর পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে মানুষ দূষণের বিষ পান করছে।
১৯৭২ সাল থেকে পৃথিবী জুড়ে বারবার পরিবেশ সম্মেলন হয়েছে, পরিবেশ বার্তা ঘোষিত হয়েছে কিন্তু উন্নতিশীল দেশের রাষ্ট্রনায়করা কার্বন নির্গমন কমাতে উদ্যোগী নন, উপরন্তু ক্রমাগত যুদ্ধ আর তার প্রস্তুতিতে পরিবেশ বিষয়ক সমস্ত আন্তর্জাতিক চুক্তির বাস্তবায়ন শুন্য মার্গে। তবু জেগে থাকে আশা। মানুষই ভুল করে, আবার তার থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষ বেঁচে থাকার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। দেরিতে হলেও ঘরে-বাইরে মানুষ দূষণ বিরোধী অভিযানে নিজেকে যুক্ত করছে এবং রাস্তায় দাঁড়িয়ে সম্মিলিত ভাবে প্রতিবাদ করছে। এই প্রতিবাদই হয়তো মানুষের চেতনাকে আঘাত করবে আর তার থেকেই জন্ম নেবে এক নতুন পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ভাবনা যা মানুষকে আর জীবজগৎকে দেবে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার আশ্বাস।