আগুনের শিখা অসংখ্য উপকরণ তৈরির জন্য অপরিহার্য। কিন্তু এই আগুন নিয়ন্ত্রণ করা এবং যে উপাদান তৈরিতে এই আগুনের শিখা ব্যবহৃত হচ্ছে সেই উপাদানের সঙ্গে আগুনের প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা বেশ চ্যালেঞ্জিং। বিজ্ঞানীরা আগুনের শিখার তাপের সঙ্গে উপাদানের প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। তারা উপাদানের উপর একটি পাতলা প্রতিরক্ষামূলক স্তর প্রয়োগ করছেন যা আগুনকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রক্রিয়াকৃত উপাদানের বৈশিষ্ট্য সুরক্ষিত করে।
আগুন একটি মূল্যবান জিনিস যা বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয় কিন্তু আগুন নিয়ে কাজ শুরু করলে, আগুনকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রায়শই আমাদের হাতে থাকে না। এই কৌশলকে গবেষকরা ইনভার্স থার্মাল ডিগ্রেডেশন (ITD) বলছেন। এ ক্ষেত্রে যে উপাদান নিয়ে কাজ করা হবে তার উপর একটি ন্যানোস্কেল পাতলা ফিল্ম বা আবরণ দেওয়া হচ্ছে। আগুনের তাপে পাতলা আবরণটি পরিবর্তিত হয় এবং উপাদানটিতে যে পরিমাণ অক্সিজেন প্রবেশ করতে পারে তা নিয়ন্ত্রণ করে। এর ফলে উপাদানটি যে হারে উত্তপ্ত হয় তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়- যার ফলস্বরূপ, উপাদানের মধ্যে সংঘটিত রাসায়নিক বিক্রিয়াকে প্রভাবিত করা যায়। অর্থাৎ, আগুন কীভাবে এবং কোথায় উপাদান পরিবর্তন করবে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
এই পদ্ধতিতে গবেষকরা প্রথমে সেলুলোজ ফাইবার নেন। তারপর সেই ফাইবারটির উপর ন্যানোমিটার-পুরু অণুর স্তর দিয়ে প্রলেপা দেওয়া হয়। উপরোক্ত বস্তুকে আগুনের শিখার সংস্পর্শে নিয়ে আসা হয়। অণুর বাইরের পৃষ্ঠটি সহজেই প্রজ্বলিত হয় এবং তাৎক্ষণিক আশেপাশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু আণবিক আবরণের অভ্যন্তরীণ পৃষ্ঠ রাসায়নিকভাবে পরিবর্তিত হয় এবং সেলুলোজ তন্তুর চারপাশে কাচের একটি পাতলা স্তর তৈরি করে। এই কাচের স্তর ফাইবারে মধ্যে অক্সিজেনের প্রবেশ মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ফাইবারগুলো জ্বলে ছাই হওয়ার পরিবর্তে ভিতরে থেকে ধীরে ধীরে জ্বলতে থাকে ও কার্বন টিউব তৈরি হয়। গবেষকরা যে সেলুলোজ ফাইবার দিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন তার আকার নিয়ন্ত্রণ করে কার্বন টিউবের দেয়াল কতটা পুরু হবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন; আর তার জন্য তারা ফাইবারগুলোতে বিভিন্ন লবণ ব্যবহার করেন যা জ্বলনের হার নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রতিরক্ষামূলক স্তরের মধ্য দিয়ে যাওয়া অক্সিজেনের পরিমাণও পরিবর্তন করেন।