অ্যান্টার্কটিকা খসে পড়া তারার এক বিস্ময়কর দেশ। সেখানকার শ্বেতশুভ্র বরফ আর তুষারের মধ্যে বিজ্ঞানীরা ৪৮০০০-এরও বেশি উল্কাপিণ্ড উদ্ধার করেছেন যেগুলো লক্ষ লক্ষ বছর ধরে পৃথিবীতে এসে পড়েছে। মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম থেকে দেখা যাচ্ছে উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে অ্যান্টার্কটিকার বরফ নরম হয়ে যাচ্ছে, যার ফলে উল্কাপিন্ড বরফের গভীরে ডুবে আমাদের চোখের আড়ালে চলে যাচ্ছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, আগামী কয়েক দশক ধরে প্রতি বছরে প্রায় ৫০০০ উল্কাখণ্ড হারিয়ে যেতে পারে। এই সমস্ত উল্কাখন্ড আমাদের মিল্কিওয়ে আকাশগঙ্গা অধ্যয়নের জন্য অতুলনীয় সম্পদ হতে পারে। এর মধ্যে সৌরজগতের প্রথমদিকে গঠিত গ্রহাণুর টুকরো, অন্য গ্রহের টুকরো বা চাঁদের টুকরো থাকতে পারে যা পৃথিবীর দিকে ছিটকে আসাতে কিছুটা ভেঙে খণ্ড হয়ে পৃথিবীর বুকে এসে পড়েছে। এখানে সৌরজগত গঠিত হওয়ার পূর্ববর্তী কিছু কিছু আন্তঃনাক্ষত্রিক উপাদানও থাকতে পারে। আকাশ থেকে অবিরাম ছিটানো হাজার হাজার টন মহাকাশের ধুলো ছাড়াও, এই পাথরের খণ্ডগুলোও মোটামুটি নিয়মিতভাবে পৃথিবীতে পড়ে। অন্য যেকোন জায়গাতেও মহাজাগতিক বস্তু পড়ে, কিন্তু অ্যান্টার্কটিকার শুভ্র হিমায়িত স্থলে এদের খুঁজে পাওয়া বেশ সহজ। কালো পাথর ও সাদা বরফের বৈসাদৃশ্যে উল্কাপিণ্ডগুলো সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। বরফের ওপরে স্থলভাগের শিলাও প্রায় থাকেনা, তাই কোনো পাথর খুঁজে পড়ে থাকলে তার মহাকাশ থেকে আসার সম্ভাবনা বেশি। উপরন্তু ঠাণ্ডা, শুষ্ক অ্যান্টার্কটিকা মরুভূমিতে উল্কাপিণ্ডগুলো ভালোভাবে সংরক্ষিত থাকে।
যে হারে উল্কা আমাদের পৃথিবীতে আঘাত করে, তার সম্ভাব্য বিপজ্জনক প্রভাব থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে এই অধ্যয়ন খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ ইউনিভার্সিটি লিব্রে ডি ব্রুক্সেলেস-এর বিজ্ঞানী ভেরোনিকা টোলেনার এবং ইটিএইচ জুরিখের হ্যারি জেকোলারির নেতৃত্বে বিজ্ঞানীদের দল একটা মানচিত্র বানিয়েছেন, যার থেকে জানা যাবে কোথায় এই শিলাগুলো সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাবে আর কতগুলো উল্কা আরও পাওয়া যেতে পারে। তারা জানিয়েছেন, ৩০০০০০ থেকে ৮৫০০০০ উল্কাপিণ্ড এই মহাদেশে পড়ে আছে, যার মধ্যে কিছু দশ লক্ষ বছরের পুরনো। অ্যান্টার্কটিকার তাপমাত্রা -৯ বা -১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে গেলেই উল্কাপিন্ড বরফে ডুবে যেতে পারে। বর্তমান বিশ্ব উষ্ণায়নের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাক-শিল্প স্তরের ওপরে তাপমাত্রা ২.৭ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেলে ২০৫০ সালের মধ্যে অ্যান্টার্কটিকার ২৮ থেকে ৩০ শতাংশ উল্কাপিণ্ড হারিয়ে যেতে পারে বলে গবেষণায় জানানো হয়েছে। কিছু অঞ্চলে, ৫০ শতাংশ উল্কাপিণ্ড হারিয়ে যেতে পারে। আর ২১০০ সালের মধ্যে প্রাক-শিল্প স্তরের উপরে ৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উষ্ণতা বৃদ্ধি হলে অ্যান্টার্কটিকার ৭৬ শতাংশ উল্কা বরফের নীচে ডুবে যাবে। আমরা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে আগামী কয়েক দশকে প্রতি বছর প্রায় ৫০০০ উল্কাখণ্ড হারিয়ে যাবে, যার সাথে সৌরজগতের নানা তথ্য ও সম্ভাব্য আন্তঃনাক্ষত্রিক স্থান আমাদের কাছে অদৃশ্য হয়ে যাবে। গবেষণাটি নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ-এ প্রকাশিত হয়েছে।