অ্যানেস্থেশিয়ার কারিকুরি

অ্যানেস্থেশিয়ার কারিকুরি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

ভাবতে অবাক লাগে যে প্রস্তর যুগ থেকেই মানুষের বড়ো ধরনের অস্ত্রোপচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। যেমন প্রত্নতত্ত্ববিদরা প্রাচীন যুগের মানুষের এমন মাথার খুলি খুঁজে পেয়েছেন যেখানে ছিদ্র করা হয়েছে অথবা বোর্নিওতে ৩১০০০ বছরের পুরনো পা কেটে ফেলার অবশিষ্টাংশ প্রমাণ করে যে তখনও অস্ত্রোপচার হত। তবে অ্যানেস্থেশিয়ার ব্যবহার ১৮৪০ সালের আগে পর্যন্ত খুব একটা পরিচিত হয়ে ওঠেনি, তারপর একজন দাঁতের ডাক্তার বা ডেন্টিস্ট প্রথম দেখিয়েছিলেন যে ইথার গ্যাস মানুষকে অস্ত্রোপচারের জন্য অজ্ঞান করে দিতে এবং তাদের ব্যথা কমাতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
কিন্তু এই অ্যানাস্থেশিয়া ঠিক কীভাবে কাজ করে?
সেডেশন, বা “মনিটরড অ্যানেস্থেশিয়া কেয়ার” ছোটো খাটো অস্ত্রোপচার যেমন বায়োপসি বা দাঁতের কিছু সমস্যার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় যার ফলে একজন রোগী সম্পূর্ণরূপে চেতনা হারায় না বরং তার শরীরের বিশেষ কিছু অঙ্গ শিথিল হয়ে পড়ে। শরীরের নির্দিষ্ট অঞ্চলে ব্যবহৃত অ্যানাস্থেশিয়া, যেমন প্রসবের সময় দেওয়া এপিডুরাল, শরীরের অনেকটা অংশ জুড়ে সংবেদনশীলতাকে রোধ করে রাখে। আরও জটিল বড়ো অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে, এমন অ্যানাস্থেশিয়া ব্যবহার করা হয় যা পুরো শরীরকে অসাড় করে দেয় এবং রোগী তার চেতনা হারিয়ে ফেলে।
বিভিন্ন অ্যানেস্থেশিয়া স্বতন্ত্রভাবে কাজ করে। স্থানীয় অ্যানেস্থেটিকস যেমন স্নায়ু কোশকে মস্তিষ্কে ব্যথার সংকেত পাঠানো থেকে বিরত রাখে। আসলে ওষুধগুলো স্নায়ু কোশের চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে চার্জযুক্ত সোডিয়াম অণুর প্রবাহ বন্ধ করে রাখে কারণ এই সোডিয়াম আয়নের প্রবাহ যখন বেশি মাত্রায় ঘটে তখন নিউরন তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় সংকেত প্রেরণ করে যা আবার মস্তিষ্কে বার্তা পাঠায়। আয়ন ব্লকিং ধাপে ধাপে ক্রমানুসারে ঘটে, প্রথমে ছোটো স্নায়ু তন্তুকে রোধ করে তারপর বড়ো ইনসুলেটেড স্নায়ু তন্তুকে ব্লক করা হয় যার প্রভাবে ব্যথার অনুভূতি হারিয়ে যায়। স্নায়ুর বার্তা পাঠানো রোধ করতে স্থানীয় অ্যানেস্থেটিকগুলোর ঘনত্ব স্নায়ু থেকে স্নায়ুতে পরিবর্তিত হয়। অত্যধিক অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগ করলে অবশ্য ঝুঁকির প্রবণতা বৃদ্ধি পায় যেমন- অতিরিক্ত মাত্রায় খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট বা ব্যক্তি কোমায় চলে যেতে পারে। জেনারেল অ্যানেস্থেটিকগুলো হয় শিরাতে তরল ইনজেকশনের মাধ্যমে বা রোগীর নিঃশ্বাসের মাধ্যমে গ্যাস হিসাবে দেওয়া হয়। গবেষকদের মতে অল্পবয়সী শিশুরা ইনজেকশন নিতে পছন্দ করে না তাদের ক্ষেত্রে ইনহেলড অ্যানেস্থেটিক ব্যবহার করা হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে একই রকম প্রভাব ফেলতে গ্যাস ব্যবহার করলে তা অনেক বেশি সময় নিয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্কদের ইন্ট্রাভেনাস ইনজেকশন দেওয়া হয়। বহুল ব্যবহৃত সাধারণ অ্যানেস্থেটিকের মধ্যে অন্যতম হল প্রোপোফোল। মনে করা হয় এটি গামা-অ্যামিনোবুটিরিক অ্যাসিড (GABA) নামক রাসায়নিক বার্তাবাহকের কার্যকলাপকে বৃদ্ধি করে। এটি স্নায়ু কোশের বার্তা পাঠানোর কাজ প্রতিরোধ করে। ফলে রোগীরা তাদের চেতনা হারায়। উল্লেখযোগ্যভাবে, বিজ্ঞানীরা যেমন সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পারেন না যে সাধারণ অ্যানেস্থেটিক কীভাবে আমাদের অজ্ঞান করে দেয়, ঠিক তেমনই আজও এটা স্পষ্ট নয় যে আমাদের নিউরাল সার্কিটগুলো কীভাবে তাদের স্বাভাবিক কাজ পুনরায় শুরু করে। সেই পথের সন্ধানে র‍য়েছেন বিজ্ঞানীরা।