স্বাদ গ্রহণ একটি জটিল প্রক্রিয়া যা আমাদের পরিবেশকে চিনতে সাহায্য করে। এটি আমাদের পুষ্টির মান অনুযায়ী খাবার নির্বাচন করতে এবং সম্ভাব্য ক্ষতিকারক খাবার প্রত্যাখ্যান করতে সহায়তা করে। খাবার বিভিন্ন যৌগ দ্বারা গঠিত, যার মধ্যে রয়েছে পুষ্টি যেমন প্রোটিন, শর্করা ও ফ্যাট এবং গন্ধ যা আমরা আমাদের মুখ ও নাকের সংবেদনশীল কোশ বা সেন্সর দিয়ে শনাক্ত করে থাকি। এই সেন্সর খাবারের স্বাদ তৈরি করে। যদিও আমাদের জিভের স্বাদগ্রন্থির সাহায্যে আমরা কোনো খাবারের স্বাদ বুঝতে পারি কিন্তু খাবারের গন্ধ এবং স্বাদের সমন্বয় তৈরি হয় তার আস্বাদন বা স্বাদুতা থেকে। খাবারের গঠন, চেহারা এবং শব্দের সাথে, এই ইন্দ্রিয়গুলো সম্মিলিতভাবে আমাদের পছন্দকে প্রভাবিত করে। বয়স, জিনগত কারণ এবং পরিবেশ সহ বেশ কয়েকটি উপাদান খাদ্য পছন্দগুলোকে প্রভাবিত করে। আমরা প্রত্যেকেই আমাদের নিজস্ব সংবেদনশীল জগতে বাস করি এবং খাওয়ার সময় কোনোভাবেই দুজন মানুষের এক অভিজ্ঞতা হয় না। বয়সের সাথে সাথে খাবারের পছন্দও পরিবর্তিত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে ছোটো বাচ্চাদের মিষ্টি এবং নোনতা স্বাদের খাবারের প্রতি একটা বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে কিন্তু তেতো স্বাদ তারা অপছন্দ করে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের তেতো খাবার আরও বেশি করে পছন্দ হয়। গবেষণায় দেখা গেছে মুখে লালার ব্যাকটেরিয়াও এনজাইম তৈরি করতে পারে যা খাবারের স্বাদকে প্রভাবিত করে।
জিনগত কারণ এবং পরিবেশ উভয়ই খাদ্য পছন্দ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুটি গবেষণায় দেখা গেছে যে জিনগত কারণ শিশু, কিশোর এবং প্রাপ্তবয়স্কদের খাদ্য পছন্দের উপর মাঝারি মাপের প্রভাব ফেলে। যেহেতু আমাদের সাংস্কৃতিক পরিবেশ এবং যে ধরনের খাবারে আমরা অভ্যস্ত সে বিষয়গুলোর ওপর আমাদের পছন্দ নির্ভর করে সুতরাং বলা যায় ধীরে ধীরে আমরা আমাদের খাবারের পছন্দ নির্ধারণ করতে শিখি। এই শিক্ষার অনেকটাই শৈশবে আমাদের বাড়িতে এবং অন্যান্য খাবারের জায়গায় ঘটে থাকে। এই শেখা আমরা পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে হয়না। বরং আমরা খাবার খেয়ে শিখি বা অন্যকে খেতে দেখে শিখি আর এটাই সাধারণত আমাদের খাবারের পছন্দ বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করে যা ইতিবাচক বা নেতিবাচক উভয় ধরনের হতে পারে। গবেষণায় দেখানো হয়েছে কীভাবে শৈশব এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে খাবারের পছন্দ পরিবেশগত প্রভাবে পরিবর্তিত হয়। বাচ্চাদের জন্য, প্রধান কারণ হল বাড়ির পরিবেশ কারণ বাচ্চারা প্রধানত বাড়িতে তৈরি করা খাবার খায়। প্রাপ্তবয়স্ক এবং কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিবেশগত কারণ খাবারের পছন্দকে প্রভাবিত করে।
কিন্তু এমন অনেক খাবার আমরা এড়িয়ে চলি যা আমাদের কাঙ্খিত অনুভূতি প্রদান করে না, কিন্তু যা আমাদের শরীরের পক্ষে ভালো, যেমন শাকসবজি বা মাছ? এই খাবার কী আমরা ধীরে ধীরে পছন্দের তালিকায় আনতে পারি? কিছু কৌশল রয়েছে যা আমাদের এমন খাবার উপভোগ করতে শিখতে সাহায্য করতে পারে যা আমরা বর্তমানে অপছন্দ করি। প্রথম পদক্ষেপ হল অপছন্দের খাবারটি আমাদের খেয়ে যেতে হবে। সময়ের সাথে সাথে প্রায় ১০ থেকে ১৫ বার খাবার গ্রহণের পর আমরা ধীরে ধীরে খাবারটি পছন্দ করতে শুরু করি। তেতো খাদ্যবস্তুর সঙ্গে মিষ্টি স্বাদের খাবার যুক্ত করলে আমরা খাবারের তিক্ততা রোধ করতে পারবো। আমাদের পছন্দের মানুষদের সঙ্গে বসে খাবারটি খাওয়া যেতে পারে অথবা আমাদের পছন্দের খাবারের সাথে। যেমন কোনো অপছন্দের সবজি আমাদের কোনো প্রিয় মাছ বা মাংসের সাথে রান্না করে খাওয়া যেতে পারে। অনেকসময় খুব খিদে পেলে আমরা যা পাই তাই খেয়ে থাকি। তখন আমাদের লক্ষ থাকে আমাদের পেট ভরানো। অথবা বার বার আমাদের নিজেকে মনে করিয়ে দিতে হবে খাবারটির খাদ্যগুণ কত বেশি বা খেলে আমাদের কী কী উপকার হবে। শিশুদের সব ধরনের খাবার খাওয়া শেখাতে হবে। শৈশবে তারা নতুন নতুন খাবার পছন্দ করতে শেখে। মনে রাখতে হবে আমরা যত বেশি খাবার পছন্দ করতে শিখব তত অন্যদের পছন্দ করতে শেখা সহজ হবে।