অন্যান্য মহাজাগতিক জীবনে বেগুনি রঙের প্রাধান্য থাকতে পারে

অন্যান্য মহাজাগতিক জীবনে বেগুনি রঙের প্রাধান্য থাকতে পারে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

আমাদের পৃথিবীতে জীবনের রঙ সবুজ। পৃথিবীপৃষ্ঠে সবচেয়ে বেশি যে রঙ আমরা দেখে থাকি তা হল সবুজ। জীবনের অনুকূল পরিবেশে সবুজ গাছপালা সবুজ রঞ্জক ক্লোরোফিল এ ব্যবহার করে সালোকসংশ্লেষণ করে শক্তি আহরণ করে, অক্সিজেন নির্গত করে। কিন্তু মহাকাশে নানা গ্রহ নক্ষত্রের মধ্যে অন্য কোনো গ্রহ থাকতে পারে যেখানে জীবনের উৎস সবুজ না হয়ে অন্য কোনো রঙের হতে পারে। সূর্য ও সৌরজগত ছাড়া অন্য কোনো নক্ষত্রকে পৃথিবীর মতো একটা গ্রহ প্রদক্ষিণ করতে পারে, পৃথিবীতে প্রাপ্ত পরিবেশে যেমন গাছপালা দৃশ্যমান আলো ব্যবহার সালোকসংশ্লেষ করে, তা না করে সেখানকার জীবন নিজেদের খাদ্য অন্যভাবে তৈরি করতে পারে। তারা সালোকসংশ্লেষণের জন্য ইনফ্রারেড বিকিরণ ব্যবহার করতে সক্ষম হতে পারে। সবুজের পরিবর্তে, পৃথিবীতে এমন অনেক ব্যাকটেরিয়া আছে, যাদের বেগুনি রঞ্জক আছে। তারা যে বেগুনি জগতের ওপর নির্ভরশীল তার একটা স্বতন্ত্র ফিঙ্গারপ্রিন্ট তৈরি করা যেতে পারে যা পরবর্তী প্রজন্মের গ্রাউন্ড- এবং স্পেস-ভিত্তিক টেলিস্কোপ দ্বারা শনাক্তযোগ্য হবে কর্নেল বিজ্ঞানীরা নিউ রিসার্চ জার্নালে রিপোর্ট করেছেন। বেগুনি ব্যাকটেরিয়া বিস্তৃত পরিবেশ অঞ্চলে থাকতে পারে, যাদের বিভিন্ন বিশ্বের উপর আধিপত্য করার সম্ভাবনা থাকতে পারে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ৫৫০০ টার বেশি এক্সোপ্ল্যানেট চিহ্নিত করেছেন, যার মধ্যে পৃথিবীর মতো ৩০ টারও বেশি গ্রহ রয়েছে। পরিকল্পিত অবজারভেটরি যেমন এক্সট্রিমিলি লার্জ টেলিস্কোপ এবং হ্যাবিটেবল ওয়ার্ল্ডস অবজারভেটরিগুলো মাহাকাশে পৃথিবীর মতো অন্য গ্রহগুলোর রাসায়নিক মেকআপ ও তাদের বাসযোগ্য অঞ্চল অন্বেষণ করবে, গ্রহের পৃষ্ঠ তরল অস্তিত্বের জন্য অনুকূল কিনা তার গঠন বিশ্লেষণ করবে। পৃথিবীতে জীবনকে একটি গাইড হিসেবে ব্যবহার করে, CSI-এর বিজ্ঞানীদের বহু-বিভাগীয় দল রঙ এবং রাসায়নিক স্বাক্ষর তালিকাভুক্ত করছেন যা একটা এক্সোপ্ল্যানেটের প্রতিফলিত আলোতে বিভিন্ন ধরণের জীব ও খনিজের উপস্থিতি দেখাবে। পৃথিবীতে কিছু ব্যাকটেরিয়া সালোকসংশ্লেষণের জন্য ইনফ্রারেড আলো ব্যবহার করে আর এদের বেগুনি রঞ্জক থাকে। গবেষকরা ২০টারও বেশি বেগুনি সালফার এবং বেগুনি নন-সালফার ব্যাকটেরিয়ার নমুনা সংগ্রহ করেছেন যাদের অগভীর জল, উপকূল এবং জলাভূমি থেকে গভীর সমুদ্রের হাইড্রোথার্মাল ভেন্ট পর্যন্ত বিভিন্ন পরিবেশে পাওয়া যেতে পারে। বেগুনি ব্যাকটেরিয়াদের হলুদ, কমলা, খয়েরি, লাল রঙের রঞ্জক থাকে। তারা এমন ধরনের ক্লোরোফিল ব্যবহার করে যা কম-শক্তির লাল বা ইনফ্রারেড আলো শোষণ করে এবং অক্সিজেন তৈরি করে না। বেগুনি ব্যাকটেরিয়ার বায়োপিগমেন্ট এবং ফিঙ্গার প্রিন্ট পরিমাপ করে, গবেষকরা বিভিন্ন অবস্থা এবং মেঘের আবরণ সহ পৃথিবীর মতো গ্রহের মডেল তৈরি করেছেন। তারা দেখেছেন সিমুলেটেড পরিবেশে আর্দ্র এবং শুষ্ক বেগুনি ব্যাকটেরিয়া তীব্র রঙিন বায়োসিগনেচার তৈরি করে। গবেষকরা বলেছেন, সালোকসংশ্লেষকারী উদ্ভিদের আবির্ভাবের আগে এই ধরনের ব্যাকটেরিয়ার পৃথিবীতে প্রচলন থাকতে পারে। বিশেষত শীতল লাল বামন নক্ষত্রকে ঘিরে থাকা গ্রহগুলো এই ব্যাকটেরিয়ার জন্য উপযুক্ত হতে পারে। আমাদের ছায়াপথে সাধারণত এই শীতল লাল বামন নক্ষত্র চোখে পড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *