আগামী শতাব্দীতে মানুষের জন্মহার ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে এবং পরবর্তী ২৫ বছরের মধ্যে বিভিন্ন দেশের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি হ্রাস পাবে। সম্প্রতি, দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় এমনটাই উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের দল সতর্ক করেন যে বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যার প্যাটার্নে এই পরিবর্তনের ফলে আগামী দশকে আমরা যে বিশাল পরিবর্তনের মুখোমুখি হতে চলেছি তার জন্য বিভিন্ন দেশের সরকারকে প্রস্তুত থাকতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন (আইএইচএমই) এর জনসংখ্যা পরিসংখ্যানবিদ নাটালিয়া ভট্টাচার্য বলেছেন ভবিষ্যতে প্রজনন হার এবং শিশুর জন্মের এই প্যাটার্ন বিশ্ব অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক শক্তির ভারসাম্যকে সম্পূর্ণরূপে পুনর্গঠন করবে, ফলত সমাজকে পরিবর্তন করবে। ২০১৮ সালে, গবেষণায় দেখা গেছে যে বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যার মধ্যে প্রজনন হার হ্রাস পাচ্ছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। নতুন সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে ২০৫০ সালের মধ্যে গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ২০৪ টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে ১৫৫টি দেশে একটি স্থিতিশীল জনসংখ্যা বজায় রাখার জন্য যে প্রজনন হার প্রয়োজন তা রাশ পাবে ফলে দেশের জনসংখ্যা কমবে। এই দেশের সংখ্যা ২১০০ সালের মধ্যে বৃদ্ধি পাবে এবং ১৯৮ টি দেশে প্রজনন হার, মৃত্যুর হারের তুলনায় হ্রাস পাবে। ভুটান, বাংলাদেশ, নেপাল এবং সৌদি আরবের মতো দেশগুলোতে প্রতি মহিলা পিছু একটি সন্তানও হবে না। ভিন্ন চিত্র অর্থাৎ প্রত্যাশিত প্রজনন হার (প্রতি মহিলা পিছু কমপক্ষে দুটি সন্তান) দেখা যাবে শুধুমাত্র সামোয়া, সোমালিয়া, টোঙ্গা, নাইজার, চাদ এবং তাজিকিস্তানের মতো দেশে। গবেষকদের মতে কৌশলগত অভিবাসন নীতি ছাড়া এই পরিস্থিতি বজায় থাকলে কম প্রজনন হার সহ দেশে মানুষের জনসংখ্যা অনিবার্যভাবে হ্রাস পাবে।
কিন্তু পরিস্থিতি কী সত্যি এত খারাপ? অনেক দেশে, কম প্রজনন হার মানে সাধারণভাবে নারী এবং পরিবারের জন্য ভালো অবস্থার ইঙ্গিত দেয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রজনন হার হ্রাস পাওয়া সাফল্যের ইঙ্গিত, ভালো গর্ভনিরোধক ব্যবহার, উপযুক্ত বয়সে সন্তান ধারণ বা জন্ম নিয়ন্ত্রণ সেইসাথে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের আরও বেশি সুযোগ প্রাপ্তিকে প্রতিফলিত করে। ১৯৫০-এর সময়ে, প্রতিটি মহিলা পিছু পাঁচটির কম শিশু জন্মগ্রহণ করে, সেখানে ২০২১ সালে প্রতি মহিলা পিছু মাত্র দুটি শিশুর জন্ম হয়েছে। কিন্তু, এই মুহুর্তে, বিশ্ব সম্প্রদায় হিসাবে আমরা যা দেখতে চলেছি তার জন্য আমরা প্রস্তুত নই। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজন শিশু আগামী কয়েক দশকে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশে জন্মগ্রহণ করবে। ২০৫০- এর মধ্যে আফ্রিকার চাদ এবং নাইজারে প্রজনন হার বৃদ্ধি পাবে এবং ২১০০ সালের মধ্যে সামোয়া এবং টোঙ্গার প্রজনন হার সর্বোচ্চ হবে। ২১০০ সালের মধ্যে, জন্ম নেওয়া প্রতি দুটি শিশুর মধ্যে একজন আফ্রিকা দেশের অন্তর্গত হবে। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ যেখানে ভাবছে কীভাবে বয়স্ক ব্যক্তিদের যত্ন নেওয়া যায় এবং তাদের জন্য অর্থ সঞ্চিত করা যায় সেখানে সাব-সাহারান আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশে যেখানে সম্পদ বা সংস্থান সীমিত, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে অস্থির, উচ্চ তাপমত্রা, সীমিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সেখানে তারা লড়াই করছে কীভাবে তাদের কমবয়সী, সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যাকে সহায়তা প্রদান করা যায়।