জীবনযাত্রায় বেশি মাত্রায় অনিয়মের ফলে বিশ্ব জুড়েই ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের শরীরের ভিতরের অঙ্গগুলোর মধ্যে যকৃৎ বা লিভার সবচেয়ে বড়ো। আমরা যা খাই, তা হজম করতে, খাবার থেকে পাওয়া শক্তি সঞ্চয় করতে আর শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করতে লিভারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এই লিভারের কোশে নানা কারণে ফ্যাট জমে। খুব অল্পস্বল্প ফ্যাট জমলে তা স্বাভাবিক। কিন্তু চর্বির পরিমাণ বাড়লেই ঝামেলা। ডাক্তারি পরিভাষায় তখন বলা হয় ফ্যাটি লিভার। এই ফ্যাটি লিভারের সমস্যা অতিরিক্ত খাওয়া এবং অনাহার দুটো থেকেই হতে পারে। সম্প্রতি নতুন গবেষণা দেখায় কীভাবে প্রাকৃতিকভাবে ক্ষুধা-প্রতিরোধী কেভফিশ, তাদের যকৃতকে রক্ষা করে নিজেদের সুস্থ রাখে। মানুষের ক্ষেত্রে, লিভারের অবস্থা বুঝতে এবং রোগ প্রতিরোধ করতে এই গবেষণা নতুন দিশা দেখাতে পারে। গবেষকরা ক্যাভফিশকে, অন্যান্য প্রাণী যারা খাবারে অভাবের প্রতি বেশি সংবেদনশীল, তাদের সাথে তুলনা করেছেন এবং দেখেছেন অনাহারের কারণে ফ্যাটি লিভার হওয়ার পিছনে রয়েছে একটি জিন। গবেষণাটি লাইফ সায়েন্স অ্যালায়েন্স পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা আরও দেখেছেন যে এই জিনটি নিয়ন্ত্রণ করলে লিভারের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতির প্রয়োগ করা যেতে পারে। বর্তমানে বহু মানুষই দেখা যায় অনেক বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করে কিন্তু পর্যাপ্ত ব্যায়াম করে না সে ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি ফ্যাটি লিভার রোগ প্রতিরোধ বা সম্ভাব্য চিকিত্সায় সাহায্য করতে পারে। ফ্যাটি লিভারের কারণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে লিভার সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না বা লিভার সিরোসিসের মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে। এই গবেষণা মানুষের মধ্যে এই রোগের অন্তর্নিহিত কারণ বুঝতে সাহায্য করে।
কেভফিশ হল এক ধরনের লোনা জলের মাছ যারা গুহা এবং অন্যান্য ভূগর্ভস্থ আবাসস্থলে বসবাস করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রাথমিক বিকাশের পর্যায়, খাদ্যের অভাবেও এই মাছেরা, তাদের মতোই অন্যান্য নদীর মাছের তুলনায় অনেক বেশি সময় বাঁচে আর তাদের যকৃতেও চর্বি জমা করে না। গবেষকরা কেভফিশ, নদীর মাছ, জেব্রাফিশ এবং এমনকি ফলের মাছিদের মধ্যে জিনের অভিব্যক্তির মাত্রা তুলনা করেছেন। তারা এমন একটি জিন শনাক্ত করেছেন যা কেভফিশ ছাড়া সকলের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী অনাহারে সক্রিয় হয় ওঠে। কেভফিশে এই জিনের প্রকাশের মাত্রা হ্রাস পায়। এটি একটি ভালো সূচক কারণ মানুষের ক্ষেত্রে এই জিনটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং স্থূলতার মতো মানুষের বিপাকীয় রোগের চিকিত্সা করা সম্ভব হবে। গবেষকদের মতে খাদ্যের অভাবের কারণে সক্রিয় হয়ে ওঠা এই জিন শুধুমাত্র ফ্যাটি লিভারের রোগ নিয়ন্ত্রণ করে না, এর প্রক্রিয়াটি ফলের মাছি থেকে মাছ পর্যন্ত, বা প্রাণীর বিবর্তনের প্রায় ৪০০ মিলিয়ন বছর ধরে সংরক্ষণ করা হয়েছে। জেব্রাফিশ এবং নদীর মাছের লার্ভাতে এই জিনের প্রোটিনকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং ফলের মাছির ক্ষেত্রে জিনটি বাদ দেওয়ার ফলে লিভারে চর্বি জমা ও লিভার বড়ো হওয়ার প্রবণতা কমে এবং লিভারকে ক্ষতি এবং অ্যাট্রোফি থেকে রক্ষা করে।