পৃথিবী এখন গ্রিন হাইড্রোজেনের দিকে ঝুঁকছে, যা পৃথিবীকে কার্বন নির্গমন কমাতে সাহায্য করবে। পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে জলের তড়িৎ বিশ্লেষণে প্রাপ্ত গ্রিন হাইড্রোজেন ভারী শিল্প, যেমন ইস্পাত তৈরি, গ্লাস তৈরি, কংক্রিট উত্পাদন এবং সেমিকন্ডাক্টর এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স তৈরির প্রক্রিয়া ডিকার্বনাইজ করার ক্ষেত্রে সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবহার করলে শূন্য নির্গমনের সাথে হাইড্রোজেন উত্পাদিত হতে পারে, যা এই মুহুর্তে পৃথিবীর পক্ষে খুব জরুরি।
বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে আর্কিয়া নামক অণুজীব যা ব্যাকটেরিয়া এবং ইউক্যারিওটসের মাঝামাঝি জীবনের এক রূপ, কোটি কোটি বছর ধরে হাইড্রোজেন গ্যাস এবং ‘আলট্রামিনিমাল’ এনজাইম ব্যবহার করে শক্তি তৈরি করছে। ছোট্ট ক্ষুদ্র এই জীব এমন পরিবেশে বাঁচতে পারে যেখানে অক্সিজেন নেই। গবেষকদের আন্তর্জাতিক দল আবিষ্কার করেছেন যে আর্কিয়ার অন্তত নটি পর্ব, যাদের অভ্যন্তরীণ ঝিল্লি-আবদ্ধ কাঠামোর অভাব রয়েছে, তারা এনজাইম ব্যবহার করে হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে। ব্যাকটেরিয়া এবং ইউক্যারিওটসের তুলনায় ক্ষুদ্রতম আর্কিয়ার শুধুমাত্র হাইড্রোজেন-ব্যবহারকারী এনজাইম নেই, তাদের হাইড্রোজেন গ্রহণ এবং উত্পাদন করার জন্য এনজাইমগুলো জটিল বৈশিষ্ট্যযুক্ত। অণুজীব প্রধানত ফারমেন্টেশনের সময় অক্সিজেন ছাড়াই শর্করা থেকে শক্তি আহরণ করে। আর এই সময়ে তারা হাইড্রোজেন গ্যাস (H2) উত্পাদন ও নির্গত করে। যে এনজাইম হাইড্রোজেন ভাঙে বা উৎপাদন করে তা হাইড্রোজিনেস নামে পরিচিত। এদের সম্বন্ধে মাত্র আট বছর আগে ব্যাপকভাবে জরিপ করা হয়েছিল। তারপর থেকে, নানা পরিচিত অণুজীব, বিশেষ করে আর্কিয়া, যারা চরম কিছু পরিবেশে লুকিয়ে থাকে, যেমন উষ্ণ প্রস্রবণ, আগ্নেয়গিরি এবং গভীর-সমুদ্রের ভেন্ট তাদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি দেখা যায়। মোনাশ ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজিস্ট ক্রিস গ্রিনিং এবং তার সহকর্মীরা ২৩০০ টারও বেশি আর্কিয়ার প্রজাতিতে এক ধরণের দ্রুত কার্যকারী হাইড্রোজিনেসের জিন এনকোডিং অংশ সন্ধান করেছেন। মোনাস ইউনিভার্সিটির গবেষকদের মতে এই আর্কিয়া থেকে শিল্পে হাইড্রোজেন উৎপাদনের জন্য অনুপ্রেরণা নেওয়ার সুযোগ আছে। তাদের গবেষণা সেল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।